কাজে না গিয়ে জিনিসপত্র বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন কলেজ ছাত্রী পার্বতী বর্মন
বর্তমান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: অন্যান্য দিনের মতো শনিবারও বিধান মার্কেটের ভিতর দিয়ে কাজে যাচ্ছিলেন পার্বতী বর্মন। শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্রী পার্বতী এনসিসি’র সঙ্গেও যুক্ত। এদিন বাজার থেকে যাওয়ার সময় হঠাৎই দেখেন একটি দশকর্মা ভাণ্ডার থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়েছে একের পর এক দোকানে। ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করছেন। সকলে আগুনের গ্রাস থেকে বাঁচাতে দোকান থেকে জিনিসপত্র রাস্তায় বের করে আনছেন। কেউ আগুন নেভাতে ড্রেন থেকে জল তুলে ঢালছেন। তার মাঝে সব হারানোর হাহাকার, কান্না। এসব দেখে কাজে যাওয়া ভুলে পার্বতী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাত লাগান।
পার্বতী বলেন, এদিন সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ আগুন লেগেছে। আমি তখন কাজে যাচ্ছিলাম। আগুন লেগেছে দেখে কাজে না গিয়ে প্রথমে বহু দোকান থেকে জিনিসপত্র বের করে আনতে হাত লাগাই। তারপর স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ড্রেন থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তাতে আগুন নেভানো যায়নি। অনেক পরে দমকলের ইঞ্জিন এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
পার্বতীর এই সাহসিকতার প্রশংসা করে সকলেই। এদিন বহু মানুষ আগুন দেখতে ভিড় করেন। যার জন্য আগুন নোভানোর কাজে সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু পার্বতী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগুন দেখেননি। তিনি বলেন, পুজোর মুখে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর মানসিকতায় আমি এগিয়ে যাই। এনসিসি করি তাই কোনও ভয় ছিল না। দমকল লড়াই করার মাঝেও একের পর এক দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কেউ দোকান থেকে জিনিসপত্র বের করে আনতে পেরেছেন। কেউ পারেননি। তার মাঝে কেঁদে চলেছেন দোকানের কর্মী থেকে মালিক, তাদের আত্মীয়-স্বজন সকলে। এরকমই এক কাপড়ের দোকানের কর্মী কাকলি ঘোষকে দেখা যায় অঝোরে কেঁদে চলেছেন। বলেন, পুজোর সময় বড় সর্বনাশ হয়ে গেল। শুধু ব্যবসায়ীদের নয়। দোকানের কর্মীদেরও পুজোর আনন্দ মাটি হয়ে গেল।
ব্যবসায়ী সুজিত পাল স্নায়ু রোগে আক্রান্ত। তাঁর হাত পা সব সময় কাঁপে। তার মধ্যেও তিনি সকলকে নিয়ে তাঁর দোকানের যতটা সম্ভব জিনিস বের করে এনেছেন। তারপর আগুনের গ্রাসে সব ছাই হয়ে যাওয়ার দৃশ্য অসহায় ভাবে দেখতে দেখতে বলেন, পুজোর বাজারের জন্য আমার মতো ব্যবসায়ীরা জামাকাপড় এনে রেখেছিলেন। আমাদের পথে বসিয়ে সব ছাই হয়ে গেল। জানি না কীভাবে এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠব। পার্বতী বর্মন। - নিজস্ব চিত্র।