• বহু বাড়িতেই চোরাগোপ্তা বৈদ্যুতিক ফেন্সিং, প্রবল বিপদের মুখে তিস্তাপাড়ের টাকিমারি
    বর্তমান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ব্রতীন দাস, গজলডোবা: বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল থেকে দেড় কিমি। রাত হলেই হাতির হামলার ভয় তাড়া করে ফেরে টাকিমারির বাসিন্দাদের। এরই জেরে হাতির হামলা থেকে বাঁচতে বহু বাড়িতে রয়েছে চোরাগোপ্তা বৈদ্যুতিক ফেন্সিং। ফলে মারাত্মক বিপদের মুখে তিস্তাপাড়ের ওই গ্রাম। এমনই ফেন্সিং থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শুক্রবার রাতে এক নম্বর টাকিমারিতে মৃত্যু হয়েছে শিশু সহ একই পরিবারের চারজনের। ঘটনায় গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এলেও জীবন দাসের মতো বাসিন্দাদের অনেকেই স্বীকার করছেন, হাতির হামলা থেকে বাঁচতে ফেন্সিং দেওয়া ছাড়া তাঁদের আর উপায় নেই। বাধ্য হয়ে গ্রামের অনেকেই তা করে থাকেন। শুক্রবার রাতেও গ্রামের কাছাকাছি এসেছিল হাতির দল। বনকর্মীরা তা তাড়িয়ে দেন। শ্রীরাম দাসের মতো অনেকে আবার বলছেন, ফেন্সিং দেওয়ার কায়দা আছে। পরেশ দাস হয়তো ঠিকমতো তা দিতে পারেননি। সেকারণে গোটা পরিবারের এই পরিণতি হল। একই ছবি দেখা যায় পাশের মিলনপল্লি, দুধিয়া বস্তি এলাকাতেও। 


    টাকিমারিতে হাতির হামলা থেকে বাড়িঘর, ফসল বাঁচাতে অনেক বাড়ি কিংবা চাষের জমিতে অবৈধ বৈদ্যুতিক ফেন্সিং দেওয়া হয়। ফেন্সিংয়ে জ্বেলে রাখা হয় বাল্ব, সেখবর পৌঁছেছে রাজ্য বিদ্যুৎবণ্টন নিগমের কাছেও। শনিবার এক নম্বর টাকিমারিতে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ দপ্তরের রিজিওনাল ম্যানেজার সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, এর আগেও আমরা বনদপ্তর ও পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়েছি। আবারও বিশেষ অভিযান হবে। গ্রামবাসীদের জীবন সুরক্ষিত করতে এদিন টাকিমারিতে দাঁড়িয়ে রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় আবেদন করেন, আপনারা কেউ হুকিং করবেন না। অবৈধভাবে কোনও ফেন্সিং দেবেন না। বিদ্যুতের প্রয়োজন লাগলে আমায় বলবেন। ব্যবস্থা করব।


    টাকিমারিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতদের বাড়িতে এদিন আসেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসেছি। একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। গরিব পরিবার। কীভাবে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো যায়, দেখছি।


    এদিন পরেশ দাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা-মা, দাদা ও আড়াই বছরের ছেলেকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ মণি দাস। ঘটনার সময় পরেশের মেয়ে মণি বাড়িতে ছিলেন না। তিস্তার চরে সব্জিখেতে কাজ করছিলেন। বাড়িতে থাকলে ওঁরও যে কী হতো কে জানে, বলছেন প্রতিবেশীরা।


    পরেশ দাসের ভাইপো পিন্টু দাস বলেন, চাষাবাদ করে সংসার চলত কাকার। সঙ্গে কয়েকটা গবাদিপশু ছিল। তিস্তার চর থেকে গোরু নিয়ে বাড়িতে ঢোকার সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। হাতির হামলা থেকে বাঁচতে বাড়িতে বিদ্যুতের ফেন্সিং দিয়েছিল। ওটাই কাল হল। মৃত পরেশ দাসের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। পরেশবাবু ও তাঁর স্ত্রী দীপালিদেবীর সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন বড় ছেলে মিঠুন। দীপালিদেবীর কোলে ছিল মেয়ে মণির আড়াই বছরের ছেলে সুব্রত। সেও বেঘোরে প্রাণ হারায়। ছোট ছেলে অনিমেষ বছর তিনেক আগে কেরলে কাজে গিয়েছেন। খবর পেয়ে ফিরছেন তিনি। • মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)