নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘আব কি বার ৪০০ পার’— স্লোগানকে সামনে রেখে লোকসভা ভোটে গিয়েছিল বিজেপি। মোদি-শাহদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর গদি বাঁচাতে শরিক নির্ভরতাই বেছে নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। গত কয়েকমাসে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনায় ‘৫৬ ইঞ্চির’ পরিচিত জোশ চোখে পড়েনি। সেই দূর্বলতা এবার পার্টির সাংগঠনিক স্তরেও ক্রমেই বেআব্রু হচ্ছে। সদস্য সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পার্টি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে বিজেপি। কিন্তু ৩৭০ ধারা বিলোপ কিংবা রাম মন্দির উদ্বোধনের পরও গত লোকসভায় ২৪০টি আসনে আটকে যায় গেরুয়া শিবিরের বিজয় রথ। যা দলের সদস্য পদ নবীকরণ প্রক্রিয়ায় গোটা দেশেই বেগ দিচ্ছে পদ্ম বাহিনীকে। পশ্চিমবঙ্গে যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে। ২০১৪ কিংবা ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর বিজেপির সদস্য হওয়ার ধুম পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যে। অন-লাইন কিংবা অফ-লাইনে বিজেপির সদস্য হওয়ার জন্য জেলায় জেলায় ক্যাম্প হয়েছিল। তবে এবার চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা। রাজ্য বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতাদের প্রতি চরম অনাস্থায় সদস্যতা অভিযান কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে দলের এক প্রাক্তন রাজ্য কমিটির সদস্য বলেন, ২০১৯ সালে অন-লাইনে কেবলমাত্র বাংলা থেকেই ১ কোটি ২০ লাখ সদস্য বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন। দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে তৎকালীন দল পরিচালনায় বাড়তি সক্রিয়তা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে লোকসভায় ভোটে এ রাজ্যে দলের ভরাডুবির পর থেকে নিচুতলায় কর্মীরা কার্যত বসে গিয়েছিল। টিকিট বিলি থেকে জয়ী প্রার্থীদের কেন্দ্র বদলের মতো হটকারি সিদ্ধান্তের পিছনে দলীয় ‘বিভীষণ’দের হাত রয়েছে বলে চর্চা রয়েছে। তারসঙ্গে বর্তমান নেতৃত্বের দক্ষতা নিয়েও জেলা থেকে মণ্ডল স্তরে প্রশ্ন রয়েছে। রাজ্যস্তরের একাধিক পরাধিকারী স্রেফ এসি ঘরে বসে সাংবাদিক সম্মেলন কিংবা সামাজিক মাধ্যমে লিখিত বিবৃতি দিয়ে নিজেদের ‘বাঘ’ হিসেবে প্রজেক্ট করছেন বলে দাবি ওই আদি নেতার। ফলশ্রুতিতে বুথে বুথে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তিতে ক্ষয় শুরু হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে গোটা দেশজুড়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে সর্বভারতীয় বিজেপি। একমাস হতে চলল, বাংলায় এখনও পর্যন্ত মাত্র লাখ দু’য়েকের বেশি সদস্য হয়েছেন। যা নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিন দুয়েক আগে সল্টলেক পার্টি অফিসে আয়োজিত বৈঠকে এই ইস্যুতে রাজ্য নেতাদের একহাত নিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মঙ্গল পান্ডে। জ্বলন্ত আর জি কর ইস্যু থেকে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় বিজেপি বঙ্গীয় পরিসরে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও সদস্য অভিযানে পার্টির ছন্নছাড়া দশা রীতিমত উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে দিল্লি নেতাদের।