• পুরসভার চেয়ারম্যানের পুজোমণ্ডপে বন্যাত্রাণের ত্রিপল!
    এই সময় | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • রূপক মজুমদার, বর্ধমান

    বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ত্রাণ নিয়ে কোনও অভিযোগ এলে বরদাস্ত করবে না সরকার। কিন্তু, সেই ত্রাণবিলিতে যে গরমিল রয়েছে তা বোঝা গিয়েছে মেমারি পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ীর পাড়ার পুজোয়। সেই পুজোমণ্ডপ তৈরি হচ্ছে বন্যাত্রাণের ত্রিপলে।এমন ঘটনা জানাজানি হওয়ায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। জেলা সিপিএম সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যয় বলেন, ‘এটাও এক ধরনের চুরি। জেলা প্রশাসন কেন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এফআইআর করছে না?’ পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক হিসেবে সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন আয়েশা রানি এ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কোনও ভাবে করা যায় না। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’

    শনিবার সকালে দেখা গিয়েছে, মেমারির নিউ বাস স্ট্যান্ড এলাকায় মধ্য মেমারি সর্বজনীন দুর্গাৎসবের মণ্ডপ ঘেরা হয়েছে রাজ্য সরকারের লোগো লাগানো সরকারি ত্রাণের ত্রিপলে। কেউ প্রশ্ন করার সাহস পাননি কারণ, এই পুজো কমিটির সম্পাদক স্বয়ং স্বপন বিষয়ী, যিনি মেমারি পুরসভার চেয়ারম্যান।

    ত্রাণের ত্রিপলে প্যান্ডেল করতে হলো কেন জানতে চাওয়া হলে পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ গৌতম নন্দী বলেন, ‘আমাদের একেবারে সাধারণ পুজো। কোনও থিম টিম নেই। ৮ বছর মাত্র বয়স। তবে প্যান্ডেলে সরকারি ত্রাণের ত্রিপল কেন ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’ এ বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব শুনে ফোন কেটে দেন। তার পরে বহুবার ফোন করা হলেও রিং বেজে যায়।

    এলাকার বাসিন্দা অশোক নন্দী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বাড়তি সুবিধা পেয়ে আসছে চেয়ারম্যানের পুজো। পুরসভার সুইপাররা নিয়ম করে মণ্ডপ পরিষ্কার করে। চারদিকে ব্লিচিং ছড়ানো হয়। অন্য কোনও মণ্ডপে এই তৎপরতা দেখা যায় না।’ পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপাড়া বাঁধের বাসিন্দা সাকিলা চট্টোপাধ্যায় ত্রাণের ত্রিপল পাননি।

    তাঁর কথায়, ‘এখনও আমরা খোলা ছাদের নীচে বসবাস করছি। পুরসভা থেকে কোনও ত্রিপল পাইনি। আমাদের না দিয়ে পুজোয় ত্রিপল ব্যবহার করা হচ্ছে জেনে খারাপ লাগছে।’ এলাকার আর এক বাসিন্দা খুদি বিবি বলেন, ‘আমরা ত্রিপল চাইতে বার বার গিয়েছি পুরসভায়। ত্রিপল পায়নি বলে আমাদের জানানো হয়েছে। এখন সবাই দেখুন, কত ভালো কাজ করছেন আমাদের পুরপ্রধান।’

    মেমারি বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এই কাজ হয়ে থাকলে খুবই অন্যায় হয়েছে। গরিব মানুষের জন্য সরকারি ত্রিপল। সেটা পুজো মণ্ডপে ব্যবহার করা একদম উচিত হয়নি।’ শহর তৃণমূল সভাপতি স্বপন ঘোষালের বক্তব্য, ‘খোঁজ নিয়ে দেখব। এমন ঘটে থাকলে ঠিক হয়নি।’
  • Link to this news (এই সময়)