এই সময়, শিলিগুড়ি: পুজোর মুখে টানা বৃষ্টি এবং ধসের জেরে বিপর্যস্ত দার্জিলিং ও কালিম্পং। পরিস্থিতি ক্রমশ বেহাল হচ্ছে জলপাইগুড়িরও। উত্তরবঙ্গের সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দু'দিনের সফরে আজ, রবিবারই শিলিগুড়িতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, বাগডোগরা থেকে নেমেই তিনি উত্তরকন্যায় যাবেন। সেখানে তিনি বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।পুজোর মরশুমে পাহাড়ে বেড়াতে যাবেন বিপুল সংখ্যক পর্যটক। হোটেল, গেস্ট হাউস প্রায় সবই বুক হয়ে গিয়েছে। তার আগে বৃষ্টি ও ধসের জেরে যে ভাবে পাহাড়ের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে রয়েছে, তাতে পাহাড়ের অর্থনীতির দিক থেকেও চিন্তার। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেবেন তিনি। দুর্যোগ বিধ্বস্ত কয়েকটি এলাকাও মুখ্যমন্ত্রী পরিদর্শন করতে পারেন বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
দিন কয়েক আগেই হাওড়া, বর্ধমান, বীরভূম-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই জেলাগুলিতে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হলেও পুজোর মধ্যে ফের ধারাবাহিক বৃষ্টির কথা আগাম শুনিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। ফলে পুজোর সময়ে সার্বিক ভাবে গোটা প্রশাসন যাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকে, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী আগেই সতর্ক করেছেন।
নিম্নচাপের জেরে গত মঙ্গলবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গের দুই পাহাড়ি জেলা এবং জলপাইগুড়িতে লাগাতার বৃষ্টি শুরু হয়। গোটা দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা জুড়ে নানা জায়গায় নেমেছে ধস। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং এবং মিরিকের রাস্তা খোলা থাকলেও ধস ও লাগোয়া পাহাড় থেকে লাগাতার পাথর নামার কারণে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। গোরুবাথান-লাভা-আলগাড়া-পেডং হয়ে সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও শুক্রবার রাতভর কালিম্পং, দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ের পাশাপাশি সিকিমে প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে তিস্তা নদীতে জলস্তর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায়। তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা বাজার এলাকার বিস্তীর্ণ অংশ শনিবার সকাল থেকে নতুন করে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। যে নিম্নচাপের জেরে এই বৃষ্টি চলছিল, সেটা ক্রমশ উত্তরবঙ্গ থেকে সরে যাচ্ছে বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর। ফলে আজ, রবিবার থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা। তবে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়েও বৃষ্টি চলতে পারে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের গ্যাংটক শাখার আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, 'রবিবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।' আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দার্জিলিং ও কার্শিয়াংয়ে গড়ে ৬০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেখানে গোটা সেপ্টেম্বর মাসের গড় বৃষ্টিপাত ৩৮৮ মিলিমিটার। বিপুল এই বৃষ্টিপাতের প্রভাব পড়েছে শিলিগুড়ি মহকুমাতেও।
শিলিগুড়ি শহরের বুক চিরে যাওয়া মহানন্দা, পঞ্চনই নদীতে জলস্তর বেড়েছে। এ দিনও ফুলবাড়িতে মহানন্দা ব্যারাজের গেট খুলে রাখতে বাধ্য হন সেচ আধিকারিকেরা। লাগাতার বৃষ্টিতে জেরবার সিকিমও। শুধু শিলিগুড়ির সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যাই নয়, প্রতিবেশী এই রাজ্যের নানা এলাকায় ধসের জেরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ডামথাঙ-নামচি রোড, ফুদাঙ-মঙ্গন রোড, নয়াবাজার-লেগশিপ রোডের মতো বড় রাস্তার পাশাপাশি অসংখ্য ছোট রাস্তাও বন্ধ। গ্যাংটকের জেলাশাসক তুষার নিখিরে বলেন, 'লাগাতার বৃষ্টির জন্যই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে সক্রিয় করা হয়েছে।'