পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলছেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠাতে বলা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সেই ত্রাণ এলাকায় পৌঁছনো মাত্র হাতে-হাতে লুট করা হয়। শনিবার দুপুরে মালদহের ভূতনির ঘটনা। উত্তরবঙ্গে টানা বৃষ্টিতে গঙ্গায় জল বাড়ায় যে এলাকার হাজার দশেক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণশিবিরে।
উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর অভিযোগ, “ত্রাণ বণ্টনে রাজনীতি হচ্ছে বলে সবাই তা পাচ্ছেন না। ক্ষোভ স্বাভাবিক।” পক্ষান্তরে, রাজ্যের সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের দাবি, “প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছনো সমস্যার। সার্বিক ভাবে চেষ্টা হচ্ছে।”
ফিরহাদের মোবাইল থেকেই এ দিন ভূতনির বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কিছু কথা বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জেলাশাসককে ত্রাণশিবির চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তবে প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তরের অন্য জেলাতেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আজ, রবিবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্লাবিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনে যেতে পারেন তিনি। তবে তা পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করবে। অন্যথায়, বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে মমতা মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’য় যাবেন। সেখানে বিকেল ৫টা নাগাদ উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। প্রশাসন সূত্রের খবর, কাল, সোমবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। দুপুর ১টা নাগাদ কলকাতায় রওনা হবেন।
টানা বৃষ্টিতে তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, সংকোশ, তিস্তা—উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ নদীরই জল বেড়েছে। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে তিস্তার চরে আটকে পড়েছেন এক হাজারের বেশি বাসিন্দা। উদ্ধারে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। কোচবিহার শহরের কাছে তোর্সা নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ। আলিপুরদুয়ারেও জল বেড়েছে নদীতে। সেই জেলায় এ দিন হড়পা বানে বাঙরি নদীতে আটকে যায় একটি গাড়ি। সেটিতে কয়েক জন পড়ুয়া ছিল। তবে সবাইকে উদ্ধার করা হয়।
জলস্তর বাড়ায় জলপাইগুড়ির দোমোহানি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত অসংরক্ষিত এলাকায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে তিস্তায়। গজলডোবা ব্যারাজ থেকে এ দিনও দশ হাজার কিউমেকের আশেপাশে জল ছাড়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলায় দেড় হাজার বাসিন্দাকে উদ্ধার করে ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছে। জলমগ্ন বানারহাট ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই সমস্ত এলাকায় গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্তাদের।
ভূতনিতে এ দিন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ বলেন, “ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ ড্রেজিং না করায় এই পরিস্থিতি।” ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ মন্তব্য না করলেও, বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর দাবি, “পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকার দায়ী।” ফিরহাদ ফিরতেই ভূতনিতে নৌকাডুবির ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল পড়ে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ভূতনির কাটাবাঁধে নৌকা উল্টে তিন থেকে চার জন ভেসে যান। তবে প্রশাসনের দাবি, নৌকাডুবিতে আপাতত কেউনিখোঁজ নেই।
বন্যার জল নামতে শুরু করেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, ডেবরা, কেশপুরের অনেক এলাকা থেকে। ডেবরায় ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। উদ্বেগ বাড়িয়েছে জলবাহিত রোগ ও ডেঙ্গি। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার মানুরে গত শুক্রবার কাঁসাইয়ে বাঁধ তৈরির কাজ চলাকালীন জলের তোড়ে নির্মীয়মাণ বাঁধ ভেঙে যায়। সে জলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কয়া, মঙ্গলদ্বারি, বিপুলহান্ডাইত্যাদি গ্রাম। দ্রুত বন্যার জল নামানোর লক্ষ্যে প্রশাসনের তরফে আগেই ঘোষপুরের গোটপোতায় ক্ষীরাই খালের বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। পাঁশকুড়াতেও বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে।
দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে এ দিন প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। তবে ডিভিসি মাইথন জলাধার থেকে ছয় হাজার এবং পাঞ্চেত থেকে ৩৪ হাজার কিউসেক হারে জল ছেড়েছে। ফলে, রাতে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়তেও পারে বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর।