আরজি করের ঘটনা নিয়ে রাজ্যজুড়ে চলা আন্দোলনের মধ্যেই দিন দশেক আগে কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মধ্যেই ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় পুলিশ আউটপোস্ট। বাড়ানো হয় পুলিশি নিরাপত্তা। তা সত্ত্বেও শুক্রবার সন্ধ্যায় রঞ্জনা সাউ (২৯) নামে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক, নার্স এমনকি এক পুলিশ অফিসারের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ফের হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় গাফিলতির বিষয়টি সামনে এসেছে।
সাগর দত্তের জুনিয়র চিকিৎসকরাই প্রশ্ন তুলছেন পুলিশি নিরাপত্তা বাড়িয়ে তা হলে লাভটা কী হলো? তাঁদের প্রশ্ন, যেখানে শুধু স্বাস্থ্যকর্মীরা নন, পুলিশও আক্রান্ত হলেন, সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথাটা কতটা খাটে। আরজি কর পর্বে সাগর দত্তের চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আগেই বাড়ানো হয়েছিল পুলিশি নিরাপত্তা। গত ১০ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের মধ্যেই চালু হয়েছে পুলিশ আউটপোস্ট।
খোদ পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া উদ্বোধন করেন সেই আউটপোস্টের। সেখানে চারজন অফিসার, ১৬ জন কনস্টেবল ও চারজন সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন দায়িত্বে। পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি হাসপাতালের নিজস্ব প্রাইভেট সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও একদল লোক একতলা থেকে হাসপাতালের পাঁচ তলায় ফিমেল ওয়ার্ডে ঢুকে হামলা চালায়। তা নিয়ে এ দিন রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের প্রশ্ন, 'আর কত অভয়া চাই?'
যদিও শুক্রবারের ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। উদ্যোগী হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া এ দিন বলেন, 'পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে সাগর দত্তে। নতুন করে আরও তিনজন অফিসার ও ১২ জন কনস্টেবল হাসপাতালের নিরাপত্তায় থাকবেন। ইমার্জেন্সিতে আরও বেশি করে নজরদারি রাখা হচ্ছে। যাতে কোনও উত্তেজনা না ছড়ায়।' ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কর্তারা এ দিন হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘুরে ঘুরে খতিয়ে দেখেন।
কোথায় কী খামতি রয়েছে, সেটিও তাঁরা ঘুরে দেখেন। অন্যদিকে, শুক্রবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সিকে শোকজ করা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীরা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে একদল লোক উপরে উঠে হামলা চালাল, তা তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, 'সিকিউরিটি এজেন্সির দোষ অস্বীকার করা যায় না। না হলে অত লোক উপরে উঠে হামলা চালাতে পারে না। পুলিশকে হাসপাতালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য বলেছি।' অন্যদিকে, এ দিন নতুন করে হাসপাতালে ৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। তা নিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রশ্ন, এটা তো সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে রাজ্য সরকার আরও আগেই করার আশ্বাস দিয়েছিল।
এত দেরি হলো কেন? যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এর নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। ফলে একটু সময় লাগল। আগে ২৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল হাসপাতালে। ধাপে ধাপে বাড়িয়ে তা ৬০০ করা হবে।