রোদ চড়তেই চড়েছে বাজার, পুজো শপিংয়ে সেই চেনা ভিড়
এই সময় | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই সময়: কর্কশ গলায় ‘ফেলা দাম, ফেলা দাম’ বলে ক্রমাগত হাঁক পাড়ছিলেন ইসমাইল। দরদর করে ঘামছিলেন। পাশে ডাঁই করে রাখা জামা-কাপড়ের স্তূপ ক্রমাগত ঝাড়ার ফাঁকে ফাঁকে ওই ঝাড়নটা দিয়েই মুখ মুছে নিচ্ছিলেন। সেই কোন সকাল থেকে বিক্রি শুরু করেছেন। দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পর হতক্লান্ত।তবে একঘেয়ে, বিরক্তিকর বৃষ্টিতে প্লাস্টিক মুড়ি দিয়ে খদ্দেরের অপেক্ষায় মাছি তাড়ানোর চেয়ে এ ঢের ভালো। পুজোর তিন মাস আগে থেকেই ভিড়ে ঠাসা বাজার দেখতে অভ্যস্ত ইসমাইলের মতো নিউ মার্কেট চত্বরের অন্য বহু হকার। কিন্তু এত দিন বাজারে তেমন প্রাণ ছিল না। চেনা ভিড়টা এত দিনে দেখা যাচ্ছে।
অনেক দিন পর উইক-এন্ডে একটু খুশি খুশি মুখ নিউ মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবু ভট্টাচার্যর। এক সপ্তাহ আগেও রীতিমতো আতঙ্কে ছিলেন বর্ষীয়ান এই ব্যবসায়ী। পুজোর মাত্র ১০-১২ দিন আগে থেকে বাজার ঘুরতে শুরু করেছে দেখে নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন ব্যবসায়ীরা। দেবু বলছেন, ‘গত ৪০ বছরে এত খারাপ বাজার আমি দেখিনি। ২০২০-তে কোভিডের সময়ে অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। কিন্তু তখন তো তবু কোভিডের কথা বলে মনকে সান্ত্বনা দেওয়া যেত।’
গড়িয়াহাট মার্কেট হোক বা নিউ মার্কেট, হাতিবাগান হোক বা অন্য কোনও জায়গা— ‘পুজোর বাজার’ বলতে শহর যেটা বোঝে, সেটা শুরু হয়ে যায় রথের পর থেকেই। এ বছর কোনও এক অজ্ঞাত কারণে রথ পার হয়ে গেলেও শহরে পুজোর বাজারটা সেই ভাবে জমেনি। অগস্ট পড়ে যাওয়ার পরে পুজো যখন আর মাত্র দেড় মাস দূরে, সেই সময়েই ঘটে গেল আরজি কর হাসপাতালের ভয়াবহ ঘটনা। শুধু শহর নয়, গোটা রাজ্যেরই আর ‘পুজো শপিং’-এর মুড ছিল না। অতি ধীর গতিতে রাজ্য যখন কিছুটা ছন্দে ফিরছে, তখনই ফের ধাক্কা। এ বার বন্যা।
হাতিবাগান বাজার মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রঞ্জন রায় বলছেন, ‘হাওড়া, হুগলির পাশাপাশি পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বর্ধমান থেকে বহু মানুষ আমাদের খদ্দের। এ বার তো ওই জায়গাগুলোই বন্যায় ভাসল। আমরাও ডুবলাম।’ তবে গত কয়েক দিন রোদের তেজ কিছুটা চড়া হতেই বাজারে দেখা যেতে শুরু করেছে পুজোর চেনা ভিড়। বাজার কি অনেকটাই দেরিতে জমল? মাঝে আর একটা মাত্র উইক-এন্ড!
‘নেই মামার চেয়ে চেয়ে কানা মামা ভালো’, বলছেন গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের অভিজিৎ সাহা। তাঁর মতে, ‘পুজোর এক মাস আগে থেকে গড়িয়াহাট মোড়ে পুলিশকে দড়ি ফেলে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এ বার সেই কাজ শুরু হয়েছে মাত্র কয়েকটা দিন আগে। ভিড়ে-ঠাসা ফুটপাথ এত দিন পর আমরা দেখছি। পুরোপুরি লস হওয়ার চেয়ে শেষ ১০-১২ দিন যতটা ব্যবসা হয়ে যায়, আমাদের জন্য ততই ভালো।’
পর্দার ডিজ়াইন পছন্দ করতে ব্যস্ত মহিলার পিছন থেকে হঠাৎ ধাক্কা খাওয়ার পর বিরক্ত মুখে ‘দেখে চলতে পারেন না?’, বা বিরক্ত মুখে ‘সরুন, এগনোর জায়গা দিন’ বলতে বলতে এগিয়ে যাওয়া লোকজনকে না-দেখলে গড়িয়াহাটের ব্যবসায়ীরা কী করেই বা স্বস্তি পান! দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সেই স্বস্তি ফিরেছে।