বামেদের দ্বিচারিতা, উৎসবে ‘না’ বলে শপিংয়ে মজে শতরূপ! ভাইরাল ছবি
প্রতিদিন | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘আপনি আচরি ধর্ম শেখাও অপরে’… এই প্রবাদটি নতুন করে ফিরে এল রবিবার। সিপিএমের শতরূপ ঘোষের হাত ধরে। বাম নেতাকে দেখা গেল দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এক ঝাঁ চকচকে এক শপিং মলে পুজোর কেনাকাটিতে মন দিতে। ফেসবুকে সেই ছবি ঘুরে বেড়াতেই ঢোঁক গিলে নেটিজেনরা চন্দ্রবিন্দুর গান গাইছেন। ‘অঙ্ক কী কঠিন!’ আন্দোলনের নামে এবারের পুজো বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে সিপিএম। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থেই উৎসবে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছেন, সেখানে আন্দোলনের হুজুগ তুলে সিপিএম পুজো বানচালের প্রবল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ সেই বামেদের এক নেতা কিনা উৎসবে না ফিরতে চেয়েও আশ্চর্যজনক ভাবে উৎসবের জন্য কেনাকাটা করতে পৌঁছে গেলেন শপিং মলে। পুঁজিবাদের তুমুল এক প্রতীক ওই ‘পশ’ শপিং মলে তাঁর ছবি দেখে তাই সিপিএম সমর্থকরাও যে বাক্যি হারাবেন তা বলাই বাহুল্য৷
আর জি কর কাণ্ডে বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী আর্জি জানিয়েছিলেন উৎসবে ফেরার। শাসকদলেরও আর্জি ছিল, দুর্গাপুজো ছোট উৎসব নয়। একে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষের অন্ন সংস্থান হয়। ঢাকি, পটুয়া, বস্ত্র ব্যবসায়ী, খুচরো বিক্রেতারা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করেন এই সময়টার জন্য। নির্যাতিতা বিচার পাক সবাই চায়। কিন্তু আন্দোলনের নামে তাঁদের পেটের ভাত কেড়ে নেওয়া কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যদিও সেই ঘটনার পর বামেদের তরফে প্রত্যুত্তর এসেছিল ‘উৎসবে ফিরব না।’
মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়ে চোখা চোখা ভাষণে হাত তালিও কুড়িয়েছিল প্রচুর। তবে লাল শিবিরের ‘মুখের কথা’ ও ‘মনের কথায়’ ফারাক স্পষ্ট হল পুজোর দোরগোড়ায়। উৎসবে না ফেরার বার্তা দিলেও, উৎসবের শপিংয়ে দিব্যি মেতে উঠলেন সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ। শপিং মলে বাম নেতার কেনাকাটার ছবি সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসতেই ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগে বিদ্ধ হল রাজ্য সিপিএম।
অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে সিপিএমের দলীয় মুখপত্র গণশক্তিতে পুজোর বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্ক চরম আকার নেয়। উৎসবে না ফেরার বার্তা দেওয়া সিপিএমের মুখপত্রে এহেন বিজ্ঞাপণকে আক্রমণ শানিয়ে কুণাল ঘোষ লিখেছিলেন, ‘ফেসবুকে বিপ্লব—পুজো নয়, উৎসব নয়। আর টাকা পেলে উল্টো শ্লোগান কাগজে।’ কুণাল এও লেখেন, কমরেড এটা পার্টির কাগজ, বাণিজ্যিক নয়। টাকার জন্য আত্মাকে বিক্রি করা যায় না। এটা দ্বিচারিতার দৃষ্টান্ত। সেই ঘটনার পর সোশাল মিডিয়ায় শতরূপের শপিংয়ের ছবি ভাইরাল হতেই কটাক্ষ করেছেন নেটিজেনরা। কেউ লিখেছেন, ‘এদের দলটাই ভণ্ড।’ কারও মতে, ‘জন্ম থেকেই এই সিপিএম দলটা দ্বিচারিতা করে চলেছে।’ যে ব্যক্তি এই ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন, তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘উৎসবে ফিরছি না, কিন্তু উৎসবের শপিংয়ে আছি।’
উল্লেখ্য, গোটা বাংলা দুর্গাপুজো ঘিরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে শুধু উৎসবেই নয়, অর্থনৈতিক পরিসরেও। মৃৎশিল্পী থেকে শুরু করে শোলা, প্যান্ডেল, আলোর কাজ যাঁরা করেন, প্রত্যেকের নজর থাকে আশ্বিণে। দেবীর খুঁটিনাটি সমস্ত সাজগোজ শেষে পুজো একেবারে শেষ হলে পর অর্থাগম হবে, এই আশায় গোটা বছর দিন গোনেন তাঁরা। উৎসবে ফিরছি না এই হিড়িকে এবছর বরাত না পেলে সেসব মানুষের কী হবে? তা ভাববার বইকি। ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে সম্পাদক শাশ্বত বোস বলছিলেন, কলকাতার পুজোয় কমবেশি ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক আদানপ্রদান হয়ে থাকে। অঙ্কটা কত বড়, তা বোঝাই যাচ্ছে।