দুর্গাপুজোর মণ্ডপ সাজানোর নানা উপকরণ দিয়েই তৈরি করা হয়েছিল বিরাট আকারের এক শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ড! যেটির থাকার কথা ছিল দুর্গা মণ্ডপের একেবারে সামনে। কিন্তু, আপাতত সেই 'শিল্পকলার'র স্থান হয়েছে মণ্ডপের পিছনে, লোকচক্ষুর কিছুটা আড়ালে! বদলে মণ্ডপের সামনের অংশে জ্বলজ্বল করছে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষের পেল্লায় কাটআউট।
ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছে?
যে পুজো নিয়ে কথা উঠেছে, তার উদ্যোক্তা হল - বেলেঘাটা গান্ধী মাঠ ফ্রেন্ডস সার্কেল। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, এবছর তাদের পুজোর থিম ছিল 'বাবা' । কিন্তু, সেই থিমের সঙ্গে ইদানীংকালে বারাবার সংবাদ শিরোনামে উঠে আসা শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ডের কী সম্পর্ক?
উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, একটি পরিবারে যে বাবা বা পিতাই হলেন আসল শিরদাঁড়া, সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন তাঁরা! সেই জন্যই তৈরি করা হয়েছিল বিরাট আকারের ওই শিরদাঁড়া !
এরপর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এটাই যখন তাঁদের ভাবনা ছিল, তাহলে উদ্যোক্তারা তাঁদের সেই অবস্থান থেকে সরে এলেন কেন? এর জবাবে বলা হচ্ছে, আর জি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা, এবং তার জের ধরে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ফলে প্রতীকী শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ড নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সেই বিষয়টিকে টেনে এনে যাতে কোনও বিতর্ক না হয়, তার জন্যই নাকি অনেক পরিশ্রম করে মণ্ডপ সজ্জার জন্য তৈরি করা ওই শিরদাঁড়াটি মণ্ডপের পিছনে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে টিকা-টিপ্পনী শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত খবরে বিরোধীরা বিষয়টিকে কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের শাসকদলের চাপেই কি এমন আপস করতে বাধ্য হয়েছে বেলেঘাটার ওই ক্লাব?
আর জি করের নৃশংস ও পৈশাচিক ঘটনার পর রাজ্যে এমন এক আবহ তৈরি হয়েছে, যার সাক্ষী শুধু বাঙালি কেন, গোটা দেশ কখনও হয়নি। তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে বহু বারোয়ারি ক্লাব রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া পুজোর অনুদান নিতে অস্বীকার করেছে।
অনেক জায়গাতেই পুজো হচ্ছে সাদামাটাভাবে। দুর্গাপুজোর রীতি, নিয়মের সঙ্গে কোনও আপস না করা হলেও কাটছাঁট করা হয়েছে পুজোর জাঁকজমকে। সেই প্রেক্ষাপটে বেলেঘাটার এই ঘটনা নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।