• পুজোর বাজারে থিকথিকে ভিড়, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও আরামবাগে একই চিত্র
    বর্তমান | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও আরামবাগ: বুধবার মহালয়া। তার আগে পুজোর আমেজের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই হইহই করে আনন্দে মাতার পালা। তাই পুজোর সপ্তাহখানেক আগের রবিবারে ভিড় উপচে পড়ল বাজারে। বিকিকিনির আসর ভরিয়ে রাখলেন সাত থেকে সত্তর বয়সিরা। রবিবার বেলা যত গড়িয়েছে, ততই ভিড় বাড়তে শুরু করেছে বাজারে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আরামবাগ শহরের বিভিন্ন বাজারে এদিন ভিড় জমিয়েছিল কাতারে কাতারে মানুষ। জামা, জুতো থেকে শুরু করে গয়না-সবই ছিল বিকিকিনির তালিকায়। প্রত্যেকেই যেন পণ করেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, খালি হাতে ফিরবেন না। গ্রামে-গঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারেও এদিন বিক্রিবাটায় খুশি বিক্রেতারা। 


    রবিবার বিকেলে পুরুলিয়ার চক বাজারের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল বছর আটের বালিকা। পোশাকের দোকান দেখেই বাবার কাছে বায়না, একটি নতুন জামার জন্য। বান্ধবীদের প্রত্যেকের নতুন জামা হয়েছে। শুধু তারই হয়নি এখনও। শেষে দিনমজুর বাবার কাছে সারা না পেয়ে রাস্তার উপরেই ধুপ করে বসে পড়ে সে। অগত্যা, মেয়ের আবেদনে সারা দিয়ে ফুটপাত থেকে একটি ‘সস্তা’র জামা কিনে দেয় বাবা। তাতেই অবশ্য খুশি মেয়ে। হাতে নতুন জামা পেয়ে এখন প্রজাপতির মতো উড়ছে সে।


    রবিবার পুরুলিয়ার দেশবন্ধু রোডের একটি শপিং মলে বাজার করতে এসেছিলেন তন্ময় ও সঙ্গীতা। দীর্ঘ প্রায় সাত বছরের প্রেম। প্রেম শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতি বছরই তাঁরা একসঙ্গে পুজোর বাজার করেন। তবে, এবারের পুজোর বাজার দু’জনের কাছেই স্পেশাল। তন্ময় বলেন, ‘প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে এটা আমাদের শেষ পুজো। কারণ কয়েক মাস বাদেই তো ও বউ হয়ে যাবে। তাই এবারের পুজোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রেমিকাকে এটাই শেষ পুজোর উপহার।’ আবার, একই মলে এদিন জমিয়ে কেনাকাটা করে প্রায় ৬৮বছর বয়সি পিয়ালি দত্তগুপ্ত। পিয়ালিদেবী দীর্ঘ কয়েক বছর শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর একমাত্র ছেলে সৌভিক স্ত্রী, পুত্র নিয়ে বর্তমানে থাকেন আমেরিকায়। এখানে কেবল বুড়ো-বুড়ি। পিয়ালিদেবী বলেন, দীর্ঘ প্রায় চার বছর পর এই পুজোয় ছেলে, বউমা, দাদুভাই সবাই বিদেশ থেকে আসছে। তাই ছেলের জন্য পাঞ্জাবি, বউমার শাড়ি, দাদুভাইয়ের জন্য জামা প্যান্ট কিনছি। এখনও কতকিছু কেনা বাকি রয়ে গেল!’


    এদিনের পুজোর বাজারে ভিড় দেখে খুশি ব্যবসায়ীরাও। বাঁকুড়া শহরের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী বলেন, নিম্নচাপের জেরে পুজোর আগে সেভাবে বেচাকেনা হয়নি গত কয়েকদিন। তবে, এদিন সেসব ঘাটতি পুষিয়ে নিয়েছি। আগামী এক সপ্তাহ কার্যত দম ফেলার ফুরসত পাব না বলেই মনে হচ্ছে। 


    তবে, এখনও মাস শেষ না হওয়ায় রবিবার পুজোর বাজার করতে পারেননি অনেকেই। বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা শম্পা রজক এদিন কেনাকাটা করতে এসেছিলেন বটে, কিন্তু বিশেষ কিছু কিনতে পারেননি। তিনি বলেন, স্বামী বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। এখনও সেপ্টেম্বর মাসের বেতনের টাকা হাতে পায়নি। তবে দুই শিশুসন্তান গত কয়েকদিন ধরেই বায়না ধরেছিল। ফলে তাদের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনেছি। স্বামীর মাইনে হলে পরে এসে বাকি কেনাকাটা করব।


    আরামবাগের গৃহবধূ দীপালি মণ্ডল বলেন, রবিবার ছুটির দিন থাকায় বাড়ির কাজ সেরে শপিংয়ে বেরিয়েছি। বাড়ির সকলেই জন্য কেনাকাটা করেছি।
  • Link to this news (বর্তমান)