অরূপ সরকার, দুর্গাপুর: হারিয়ে যেতে বসেছে ডাকঘর। অথচ একসময় ডাক ব্যবস্থাই ছিল যোগযোগের একমাত্র মাধ্যম। ডাক ব্যবস্থাকে থিম করতে চলেছে দুর্গাপুরের ফুলঝোড় সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। বিগ বাজেটের এই পুজো কমিটি মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমায় লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করছে। সেইসঙ্গে সামাজিক কাজেও তারা নজির গড়েছে ইতিমধ্যেই। এবার তাদের পুজো ৩৩তম বছরে পদার্পণ করেছে।
পুজো কমিটির সম্পাদক সত্যজিৎ রায় বলেন, গ্রামগঞ্জ থেকে শহরতলিতে একসময় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল ডাকঘর। একসময় সুখ, প্রেম, আবেগ, স্মৃতি, দুঃখ, বেদনা সবেতেই পোস্টকার্ড বা চিঠি ছিল একমাত্র ভরসা। দিগন্ত থেকে দিগন্তে চিঠি নিয়ে যাবার দায়িত্ব পালন করত রানার। কত গ্রাম কত পথ পেরিয়ে খবর আসতে ভোর হয়ে যেত। সময়ের সঙ্গে ডাকঘরের সেই পোস্টকার্ড ও চিঠি হারিয়ে গিয়েছ। তার পরিবর্তে আমরা ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুককে আপন করে নিয়েছি। তাতে সবকিছুই দ্রুত হচ্ছে, কিন্তু কোথাও যেন মনের ছোঁয়া হারিয়ে যাচ্ছে। ডাক নিয়ে আসা সেই চেনা মানুষগুলো যাঁদের পোশাকি নাম পিওন। তাঁরা আমাদের সুখের বার্তায় সুখী হতেন এবং দুঃখের বার্তায় সমব্যথী হতেন। এই একাত্মতা আজ কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। ফিরে আসুক পোস্টকার্ড-চিঠি। ফিরে আসুক রানার। এমনই থিম তুলে ধরছি আমরা। থিমের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বিখ্যাত শিল্পী চঞ্চল আচার্য। মণ্ডপ গড়তে ব্যবহার হচ্ছে হোগলা, খেজুর পাতা, ঝাউ গাছের ফল, নারকেলের খোলা, নারকেল গাছের ছাল, সরকাঠি, খড়, বাবুইদড়ি, নারকেল দড়ি ইত্যাদি। ছ’বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি আমাদের পুজোর উদ্বোধন করছেন। এবারও তিনিই উদ্বোধদন করবেন।
পুজো কমিটির সভাপতি উদয়ন চৌধুরী বলেন, এবার পুজোর বাজেট প্রায় ৩৫লক্ষ টাকা। মণ্ডপের উচ্চতা প্রায় ৫০ফুট। প্রতিমায় থাকছে চমক। এছাড়াও আমরা সামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকি। এলাকার প্রায় এক হাজার দুঃস্থ শিশু ও বয়স্কদের নতুন বস্ত্র বিতরণ করি। ষষ্ঠীতে এলাকার দুঃস্থ পরিবারের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বিগ বাজেটের পুজোগুলি পরিক্রমা করানো হয়। এবছর দু’টি বাসে প্রায় ১২০জনকে নিয়ে আমরা পুজো পরিক্রমা করাব। অষ্টমীতে খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করা হবে। এবছর আমাদের থিম দর্শনার্থীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হবে। -নিজস্ব চিত্র