• বিমা কোম্পানির গড়িমসিতে মিলছে না ক্ষতিপূরণ, খরিফ মরশুমে শস্যবিমার আবেদনে চাষিদের অনীহা
    বর্তমান | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: চাষের ক্ষতিপূরণ পেতে শস্য বিমায় প্রতিবছর চাষিদের আবেদন করতে হয়। কিন্তু ক্ষতি হলেও বিমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেয় না। নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেয় চাষিদের। কোম্পানির দাবি, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নাকি দেখা গিয়েছে, জমিতে চাষের কোনও ক্ষতি হয়নি। এভাবেই ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন নদীয়া জেলার বহু চাষি। এজন্য বেশ ক’বছর ধরেই বিমা কোম্পানির উপর ক্ষোভ বাড়ছিল তাঁদের। তার প্রতিফলন পড়ল এ বছর। জেলার খরিফ মরশুমে বাংলা শস্য বিমার আবেদনে আগ্রহ নেই বহু চাষির। আগামী সোমবার শস্য বিমার আবেদন জমা করার শেষদিন। অথচ, আবেদন আশানুরূপ জমা পড়েনি। তাই নতুন করে সময়সীমা বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। 


    নদীয়া জেলার কৃষি উপ অধিকর্তা জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত আশি হাজার চাষি শস্য বীমার জন্য আবেদন জমা করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে বেশি সংখ্যক চাষিকে বিমার আওতায় আনা যায়। যে সমস্ত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, সেখানে বিশেষ শিবির করা হয়েছিল। সেখানকার চাষিদের বিমার জন্য আবেদন করানো হয়েছে। যাতে তাঁরা ক্ষতিপূরণ পারেন।’ 


    কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর খরিফ মরশুমে জেলায় প্রায় দেড় লক্ষ চাষিকে বাংলা শস্যবিমার আওতায় আনা হয়েছিল। এবার ২৯ তারিখ পর্যন্ত বিমার জন্য মাত্র আশি হাজার চাষি আবেদন জমা করেছেন। যদিও তাঁদের সবার নাম এখনও পর্যন্ত পোর্টালে তোলা হয়নি। সেই আবেদন যাচাই করে দেখার প্রক্রিয়া চলছে। কৃষি দপ্তরেরও একাংশের দাবি, বিমা কোম্পানির গড়িমসির কারণেই চাষিরা মুখ্যমন্ত্রীর এই মানবিক প্রকল্প থেকে মুখ ফেরাতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ বছর বছর চাষে ক্ষতির মুখে পড়লেও বিমা কোম্পানির জন্য বহু চাষিকে ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। 


    জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সিরাজ শেখ বলেন, ‘বিমা কোম্পানির গড়িমসি রয়েছে। আমাদের রাজ্য সরকার একটি কোম্পানিকে দিয়ে শস্য বিমার কাজ করাই। কিন্তু বিমা কোম্পানি যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা পূরণ করে না। এই নিয়ে বৈঠকে আপত্তি জানানো হয়েছে। বিমা কোম্পানি ঠিক করে কাজ করলে অনেক চাষির ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা।’ 


    শিবিরে চাষিদের ফর্ম দেওয়া, জমা নেওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ বিমা কোম্পানিই করে থাকে। কৃষিদপ্তরও সাহায্য করে। কোন চাষি ক্ষতিপূরণ পাবে তাও বিমা কোম্পানি নির্ধারণ করে। প্রাকৃতিক কারণে কোথাও চাষের ক্ষতি হলে তার রিপোর্ট ব্লক কৃষি দপ্তরের তরফ থেকে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিমা কোম্পানিও স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও চাষের জমির কতটা ক্ষতি হয়েছে তা পর্যবেক্ষণে রাখে। সমস্যা হচ্ছে ঠিক এই জায়গাতেই। কারণ অনেকক্ষেত্রেই ফসলের গোড়ার কাছে পোকা ধরে যায়। তখন ফসলের ক্ষতি হয়। কিন্তু তা স্যাটেলাইটে ধরা পড়ে না। যার ফলে চাষের ক্ষতি হলেও বিমা কোম্পানি সেই চাষিকে ক্ষতিপূরণের জন্য অনুমোদন দেয় না। বিগত বছরেও তাই হয়েছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)