সন্দীপ বর্মন, মাথাভাঙা: আজও নিষ্ঠা ও নিয়ম মেনে মাথাভাঙা-১ ব্লকের শিকারপুরের প্রামাণিক বাড়িতে হয় দুর্গাপুজো। শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোয় সপ্তমী থেকে নবমী তিন দিন বলিপ্রথা রয়েছে। গোটা গ্রামের মানুষ প্রামাণিক বাড়ির পুজো দেখতে আসে। আগের মতো বড় মাপের পুজো না হলেও নিষ্ঠা ও নিয়মে খামতি রাখেন না পরিবারের সদস্যরা।
কত বছর ধরে প্রামাণিক বাড়ির পুজো হচ্ছে নির্দিষ্ট করে বর্তমান প্রজন্মের কেউ বলতে না পারলেও রাজ আমলের পরিবারের এক সদস্য প্রথম পুজোর প্রচলন করেছিলেন। দেবত্তোর সম্পত্তি হিসেবে দুর্গামন্দিরের সেবায়েতের নামে ৩০০ বিঘা জমিও দানপত্র করা হয়েছিল। পরিবারের তরফে সেবায়েত নিযুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রামাণিক বাড়ির সেবায়েত গীতা প্রামাণিক।
পরিবারটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শিকারপুরের এই পরিবারের পূর্বপুরুষ সুনন্দেশ্বর প্রামাণিক ছিলেন কোচবিহার রাজার জমিদার। মাথাভাঙা-শিলিগুড়ি রাজ্য সড়কের দক্ষিণ দিকে ২ কিমি ভিতরে বাস প্রামাণিক পরিবারের। সুনন্দেশ্বর প্রামাণিক প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। তিনি মন্দিরে পুজো সহ পুজোর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করার জন্য ৩০০ বিঘা জমি বরাদ্দ করে যান। পরিবারের কাউকে সেবায়েত করে তাঁকে জমি ও পুজোর দেখভাল করার নিয়ম চালু রয়েছে পরিবারে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূমি সংস্কার আইনের কবলে পড়ে সম্পত্তির ২২৫ বিঘা জমি জিরো খতিয়ান হয়ে যায়। বর্তমানে ৭০ বিঘা জমি মন্দিরের সম্পত্তি হিসেবে রয়েছে। সেই জমি চাষ করেন ভাগচাষিরা। তাঁরা ঠিকমতো চাষাবাদের ভাগ দেন না বলে অভিযোগ পরিবারের। ফলে এখন পুজোর জৌলুস কিছুটা কমলেও নিয়ম নিষ্ঠায় খামতি রাখেন না পরিবারের সদস্য ও সেবায়েত।
বর্তমান প্রজন্মের তরফে সেবায়েত ছিলেন রবীন্দ্র প্রামাণিক। তিনি পরলোক গমন করলে স্ত্রী গীতা প্রামাণিক সেই দায়িত্ব পালন করছেন। গীতাদেবী জানান, নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে পরিবারের শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজো প্রতি বছর করা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী তিন দিনই পাঁঠাবলি দেওয়া হয়। প্রসাদ বিতরণ করা হয় গ্রামের মানুষের মধ্যে। নবমীতে হয় পঞ্চবলি। সেখানে মানকচু সহ কুমড়ো বলি দেওয়ারও প্রচলন রয়েছে। আগে অষ্টধাতুর দুর্গা প্রতিমায় পুজো হতো মন্দিরে। ২০০১ সালে চুরি হয়ে যায় প্রতিমা। চোর গণেশ, দুর্গার মহিষ ও বাহন বাঘের মূর্তি ছেড়ে যায়। বর্তমানে বেদিতে এই তিনটি মূর্তি রেখেই পুজো হয়।
প্রামাণিক পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য মহেন্দ্র প্রামাণিক বলেন, আগের মতো আর পরিবারের সঙ্গতি নেই। কিন্তু, নিয়ম-নিষ্ঠায় খামতি রাখি না। পাঁঠাবলি, স্থানীয়দের প্রসাদ বিলি সবই করা হয়। সম্পত্তির অনেকেই জবরদখল হয়ে আছে। চাষাবাদের ভাগও তাঁরা দেন না। চাষাবাদের ভাগ পেলে পুজোর জৌলুস অনেকটাই বৃদ্ধি পেত।