গোপাল সূত্রধর ,পতিরাম: দুর্গা নয়, পুজোর পাঁচদিন মনসার আরাধনায় মেতে ওঠে বালুরঘাট ব্লকের ফুলঘড়া গ্রাম। দুর্গাপুজোর সমস্ত নিয়ম মেনে মনসা দেবীর পাশাপাশি লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পুজোও করেন বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের দাবি, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। পুজোর পাঁচদিন মনসামঙ্গলের গান ও দ্বাদশীতে মেলার পরেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। ঐতিহ্যবাহী ফুলঘড়া গ্রামে মনসা পুজো দেখতে ভিনজেলা থেকেও হাজির হন ভক্তরা। জোরকদমে সেই পুজোর প্রস্তুতি চলছে। এবার আলোকসজ্জার সঙ্গে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
মনসা পুজো কমিটির সভাপতি ভজন মণ্ডল বলেন, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে এখানে দেবী দুর্গা রূপে পুজো করা হচ্ছে মনসার। দুর্গাপুজার মতোই অঞ্জলি দিতে এখানে ভিড় হয়। এই পুজোতে পুরোহিত, মৃৎশিল্পী, ঢাকিরা বংশপরম্পরায় কাজ করেন।
কমিটির সম্পাদক অনুপম সরকারের কথায়, আমাদের লক্ষ্য এখন অর্ধসমাপ্ত মন্দিরের কাজ শেষ করা। ফুলঘড়া গ্রামের এই মনসা পুজো ঘিরে নানা ইতিহাস রয়েছে। গ্রামের প্রবীণদের মতে, বহুকাল আগে গ্রামে সাপের উপদ্রব ছিল। দিনের পর দিন বহু মানুষের সর্পাঘাতে মৃত্যু হচ্ছিল। সেই সময় গ্রামের এক ব্যক্তি স্বপ্ন দেখেন, মনসা পুজো করলে কারও আর সর্পাঘাতে মৃত্যু হবে না। এরপর আত্রেয়ী নদীতে স্নান করতে গেলে মনসার কাঠামো ভেসে যেতে দেখেন তিনি। গ্রামবাসীরা তুলে নিয়ে এসে মন্দিরে স্থাপন করে মনসার পুজো শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে গ্রামে সাপের কামড়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
আবার অনেকে বলেন, কোনও এক সময় ফুলঘড়া গ্রামে বাইরে থেকে সাপুড়েদের একটি দল এসেছিল। কোনও কারণে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা হলে প্রচুর সাপ ছেড়ে দিয়ে চলে যান। তাই সর্পাঘাত থেকে বাঁচতে দুর্গাপুজোর সময় মনসার আরাধনা শুরু হয়। এখন এই পুজো আয়োজনে এগিয়ে এসেছে ফুলঘড়া মনসামঙ্গল ক্লাব। - ফাইল চিত্র