কেন্দ্র আমদানি শুল্ক বাড়ানোর জেরে ভোজ্যতেলের দাম চড়া
বর্তমান | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: কলকাতা ও শহরতলি তো বটেই, জেলাতেও আনাজপাতির দাম অস্বাভাবিক চড়া। ৬০ থেকে ৮০ টাকায় ঘোরাফেরা করছে বেশিরভাগ সব্জির কিলো পিছু দাম। ওল বা বেগুনের মতো কিছু আনাজ সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছে কখনও কখনও। ২০০ টাকা কিলোয় পৌঁছে চোখ রাঙাচ্ছে লঙ্কাও। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের মরশুম শুরুর আগেই চিন্তা বাড়াচ্ছে ভোজ্য তেল। বাঙালির প্রিয় সর্ষের তেল তো বটেই, সূর্যমুখী, সয়াবিন বা বাদাম তেলের মতো প্রতিটি ভোজ্য তেলের দাম কিলো পিছু বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বাঙালির হেঁশেল নতুন করে সঙ্কটে পড়েছে তেলের দামে ঝাঁঝে। এক্ষেত্রে ভিলেনের ভূমিকায় সরাসরি আসরে নেমেছে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আঁচ না কমায় যে সরকার দিন-রাত কুমিরের কান্না কাঁদছে, তারাই আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেশীয় বাজারে আগুন লাগিয়েছে তেলের দরে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কেন্দ্র জানায়, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, পাম তেল এবং সূর্যমুখী তেলের উপর আমদানি শুল্ক শূন্য থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করে। এর উপর কৃষি পরিকাঠামো এবং উন্নয়ন সেস ও সামাজিক উন্নয়ন সারচার্জ যোগ করে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ২৭.৫ শতাংশ। অন্যদিকে এই তিনটি পরিশোধিত তেলের উপর আমদানি শুল্ক ১৩.৭৫ থেকে বাড়িয়ে ৩৫.৭৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় হেঁশেলে ও অন্যান্য প্রয়োজনে যে ‘সাদা’ তেল ব্যবহার করা হয়, তার ৭০ শতাংশ আসে বিদেশ থেকে। পাম তেল আসে মূলত মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে। অন্যদিকে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল আসে ইউক্রেন, রাশিয়া, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা থেকে। তাই আমদানি শুল্ক এক ধাক্কায় বাড়লে, দেশীয় বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
বড়বাজারের এক ব্যবসায়ীর কথায়, সর্ষের তেল এদেশে সেভাবে আমদানি করা না-হলেও, তার দাম নির্ভর করে বাদবাকি ভোজ্য তেলের উপর। কারণ, অন্যান্য তেলের দাম বেড়ে গেলে, বিকল্প হিসেবে সর্ষের তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই তারও দাম বাড়ে। খোলা বাজারে যে সর্ষের তেলের কিলো গড়ে ১৬০ টাকা ছিল, তা বেড়ে ১৮০ টাকায় পৌঁছেছে। প্যাকেটজাত সাদা তেলও লিটার পিছু বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছে, দেশীয় বাজারে কৃষকদের সয়াবিন ও তৈলবীজের দাম পাইয়ে দেওয়ার জন্য তারা আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, তারা ভোজ্য তেল সংস্থাগুলিকে ‘অনুরোধ’ করেছে, যতক্ষণ পুরনো ‘স্টক’ আছে, ততক্ষণ দাম না বাড়তে। তাতে নাকি উৎসবের মরশুমে তেলের দাম বিপদে ফেলবে না সাধারণ ক্রেতাদের। কিন্তু বাজার দর চলছে নিজের মতো। কেন্দ্রের হঠকারী সিদ্ধান্তের দায় নিদারুণভাবে চোকাতে হচ্ছে গরিব ও মধ্যবিত্তকে।