• ডিজিটাল অ্যারেস্ট, প্রতারণার নয়া ফাঁদে উধাও ৪৭ লক্ষ টাকা
    বর্তমান | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘হ্যালো সিবিআই থেকে বলছি। আপনি মানব পাচারে যুক্ত। সেই সঙ্গে বেআইনি আর্থিক লেনদেনও চালাচ্ছেন। তাই আপনাকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হল।’ মাস তিনেক আগে গল্ফগ্রিনের এক বাসিন্দা এই ধরনের ফোন পেয়েছিলেন। ভয় পেয়ে তিনি জানতে চান, এর জন্য কী করতে হবে? ফোনের অন্যপ্রান্তে থাকা প্রতারকদের জবাব ছিল, কেস মিটে যাবে। কিন্তু এরজন্য দিতে হবে ৪৭ লক্ষ টাকা। ভয় পেয়ে ওই গৃহবধু টাকা দিয়ে দেন। তারপরে আরও টাকা দাবি করে আসতে থাকে ফোন। প্রতারকদের পাল্লায় পড়েছেন বুঝে অভিযোগ করেন লালবাজারে। দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চালিয়ে দুই মহিলা সহ মোট আটজনকে শনিবার গ্রেপ্তার করেছে লালবাজার। উদ্ধার হয়েছে টাকা লেনদেনের বিভিন্ন নথি।


    পুলিস সূত্রে খবর, অভিযুক্তরা ওই মহিলাকে জানায় তিনি একটি পার্সেল পাঠিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। সেটি ধরা পড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে শিশুরা ছিল। তাদের পাচার করা হচ্ছিল। তারা কেস রুজু করে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে গিয়েছে। তারাও ওয়ারেন্ট জারি করেছে। বিশ্বাস জোগাতে পাঠানো হয় সুপ্রিম কোর্টের ভুয়ো লোগো লাগানো অর্ডার কপি। তাই দেখে ঘাবড়ে যান ওই মহিলা। এরপর তাঁকে বলা হয় ভিডিও কলে আসতে। তিনি হাজির হলে সিবিআইয়ের ভুয়ো লোগো লাগানো বোর্ডের নীচে বসে থাকা এক ব্যক্তি নিজেকে বড় আধিকারিক বলে পরিচয় দেয়। কয়েক মিনিট পর তার সঙ্গে এসে হাজির হয় দুই মহিলা সহ কয়েকজন। তারা বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করতে শুরু করে।  মহিলার আধার কার্ডের নথি চাওয়া হয়। গৃহবধূ সেটি দিয়ে বসেন। নকল সিবিআই অফিসার সেজে থাকা এক ব্যক্তি এরপর জানায়, সাহেব বলেছে টাকা দিলে তাঁকে অ্যারেস্ট করা হবে না। গ্রেপ্তার থেকে বাঁচতে তিনি দু’মাস ধরে প্রতারকদের পাঠানো অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে থাকেন। প্রতিবারই টাকার অঙ্ক বাড়তে থাকে। টাকা মেটানোর পরও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় মহিলা প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝে লালবাজারে অভিযোগ করেন।


    যে অ্যাকাউন্টে মহিলাকে টাকা জমা করতে বলা হতো, তার তথ্য জোগাড় করেন তদন্তকারীরা। ব্যাঙ্ক থেকে লেনদেনের নথি জোগাড় করা হয়। তার সূত্র ধরে তাঁরা জানতে পারেন, মোট ৪৭ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। আবার সেটি বেরিয়ে গিয়ে জমা পড়েছে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে। এগুলি খোলা হয়েছে মাস চারেক আগে। এই অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে চিহ্নিত করা হয় দুই মহিলা সহ আটজনকে। এরপর পাটুলি, বিজয়গড়, যাদবপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে আটজনকে ধরেন গোয়েন্দারা। এই টাকা কোথায় রাখা আছে, তার খোঁজ চলছে। ধৃতরা জেরায় পুলিসকে জানিয়েছে, চক্র তৈরি করে তারা কলকাতায় এই কাজ চালাচ্ছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)