• সংগঠনে রদবদলের আগে মত বিনিময় চান শুভঙ্কর
    আনন্দবাজার | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সভাপতি বদল হলে তাঁর পিছু পিছু অন্যান্য পদাধিকারীদের তালিকাও বদলে যায়। কংগ্রেসের সংগঠনে এমনই দস্তুর। তবে এ বার প্রথা ভাঙতে চাইছেন নবনিযুক্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। রাজ্য ও জেলা স্তরে দলের নেতাদের সঙ্গে সবিস্তার মত বিনিময় করে তবেই সংগঠনে রদবদলের কাজে হাত দিতে চাইছেন তিনি। তার জন্য যা সময় লাগার, লাগবে।

    কংগ্রেস বরাবরই সভাপতি-কেন্দ্রিক দল। প্রদেশ কংগ্রেসে যখন যিনি সভাপতির আসনে বসেন, তিনি তাঁর মতো করে সংগঠন সাজিয়ে নেন। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, পূর্ববর্তী জমানায় ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে থাকা কোনও নেতা নতুন জমানায় গুরুত্ব পেলেন বা উল্টোটা। এআইসিসি এ বার শুধুই নতুন প্রদেশ সভাপতির নাম ঘোষণা করেছে। আগের জমানায় নিযুক্ত জেলা সভাপতিরাই দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন গত কয়েক দিনে নতুন প্রদেশ সভাপতির সংশ্লিষ্ট জেলায় কর্মসূচিতে সঙ্গীও হয়েছেন। প্রথমেই একেবারে তালিকা ধরে পরিবর্তন না-এনে জেলা নেতৃত্বের সকলের মত শুনতে আগ্রহী প্রদেশ সভাপতি। নিজেও তিনি বেরোবেন জেলা সফরে।

    মল্লিকার্জুন খড়্গে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পরে প্রদেশ কংগ্রেসের কমিটি আর নতুন করে গড়া হয়নি। লোকসভা ভোটের পরে প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ধিত বৈঠক ডেকে সংগঠনে প্রয়োজনীয় রদবদলের ভার আনুষ্ঠানিক ভাবে এআইসিসি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার আগে বাংলার ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক গুলাম আহমেদ মীরও বিধান ভবনে রাজ্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছিলেন। নতুন প্রদেশ সভাপতির নাম ঘোষণার আগে এআইসিসি বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে ঝাড়খণ্ডের অম্বা প্রসাদ এবং ওড়িশার আসফ আলি খানকে দায়িত্ব দিয়েছে। তবে মীর আপাতত দলের প্রার্থী হয়ে কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনে ব্যস্ত। সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে নবনিযুক্ত দুই সম্পাদকও বাংলায় আসেননি। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এআইসিসি-র পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া প্রদেশ কংগ্রেসে রদবদল হবে না। এর মধ্যে প্রদেশ সভাপতি ঠিক করেছেন, প্রদেশ স্তরে আগের কমিটির সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি (পিসিসি) এবং এআইসিসি সদস্যদেরও আলাদা করে ডাকা হবে। তবে সেই প্রক্রিয়া হবে পুজোর পরে।

    শুভঙ্করের মতে, ‘‘প্রদেশ সভাপতি হিসেবে সকলের সঙ্গে আগে কথা বলব। সাংগঠনিক স্তরে কেউ হয়তো ভাল কাজ করছিলেন কিন্তু প্রদেশ সভাপতি বদল হয়েছে বলেই সব বদলে গেল, এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। কে কী বলতে ও করতে চান, সেটা আগে বোঝার চেষ্টা করব।’’ বিধান ভবনে আজ, সোমবারই জেলা সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সামনে উৎসবের মরসুম ও বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে আপৎকালীন ক্ষেত্রে কী করণীয়, মূলত সেই বিষয়ে আলোচনার জন্যই বৈঠক। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গও সেখানে উঠতে পারে। কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন আছে, জেলা সভাপতি পদে ১৫ বছর বা দীর্ঘ দিন যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, জমানা বদলে সেখানে কি নতুন মুখ আসবে? অন্য দিকে, নতুন প্রদেশ সভাপতি দলের অন্দরে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁর কোনও আত্মীয়-স্বজন বা ‘কাছের লোক’ প্রদেশ কংগ্রেস চালাবেন না!

    উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (শহর) সভাপতি তাপস মজুমদার, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে নিয়ে প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর রবিবার গিয়েছিলেন কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে প্রতিবাদী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগপত্র নেওয়া, এই দাবির পুনরাবৃত্তির পাশাপাশিই শুভঙ্কর বলেছেন, ‘‘আমরা অবশ্যই পরিচিত রাজনৈতিক মুখ। কিন্তু পতাকা নিয়ে রাজনীতি করতে এখানে আসিনি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে যে আশঙ্কার কথা চিকিৎসকেরা বলছেন, নাগরিক হিসেবে তাতে সংহতি জানাতে এসেছি।’’ চিকিৎসকদের দুই প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে অবস্থানরত চিকিৎসকদের একাংশের তরফে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শোনা গিয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)