প্রমাণ লোপাটে সংগঠিত অপরাধের চিত্রই কি স্পষ্ট হচ্ছে? সন্দীপ-ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে নজরে কিছু চিকিৎসক
আনন্দবাজার | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-পড়ুয়া ধর্ষণ, খুনের ঘটনার প্রমাণ লোপাটের ক্ষেত্রে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ কয়েক জন জুনিয়র এবং সিনিয়র চিকিৎসকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে তথ্য উঠে আসছে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ৯ অগস্ট সকাল থেকে ওই চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ, খুনের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সংগঠিত অপরাধ-চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে।
আর জি করের চেস্ট মেডিসিন বিভাগে ৮ অগস্ট রাতে কর্তব্যরত জুনিয়র, সিনিয়র চিকিৎসক, নার্স, নিরাপত্তাকর্মী, সাফাইকর্মীদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, মৃতার ঘনিষ্ঠ কয়েক জন সহপাঠীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কয়েক জন জুনিয়র চিকিৎসক ক্লাস করতেন না বলে তদন্তকারীদের সূত্রে প্রকাশ। তাঁদের পরীক্ষার নম্বরের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আর জি করের স্নাতকোত্তর শিক্ষাক্রমের ওই ছাত্রী নানা মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেও কিছু সূত্র উঠে আসার দাবি তদন্তকারীদের। সিবিআই সূত্রে দাবি, পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে তাঁর প্রতিবাদী সত্তার জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের চক্ষুশূল হয়েছিলেন সেই ডাক্তার ছাত্রী।
ঘটনাচক্রে, ৯ অগস্ট সকালে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ হাসপাতালে আসার আগেই কয়েক জন জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসক চেস্ট মেডিসিনের সেমিনার হলে (যেখানে মৃতার দেহ ছিল) পৌঁছে গিয়েছিলেন বলে তদন্তে উঠে আসছে। কেন? এই তৎপরতার পিছনে কী কারণ? বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ৮ অগস্ট রাতের কর্তব্যরত জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকের মোবাইলের কল ডিটেলস এবং টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে। এতে তাঁরা কখন, কোথায় ছিলেন এবং ফোন মারফত কাদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করছিলেন, তা স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, কয়েক জন জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসক সকাল থেকেই সেমিনার হলে কার্যত মাটি কামড়ে ছিলেন বলে দেখা যাচ্ছে। তদন্তকারীদের সূত্রে আরও দাবি, নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে ওই দিন ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে রাখতে সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ সিনিয়র, জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মৃতদেহের আশপাশ থেকে নমুনা সংগ্রহের সময় এবং মৃতদেহের সুরতহাল ও ময়না তদন্তের নজরদারিতে জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশই দাপুটে ভূমিকায় ছিলেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে প্রকাশ।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, এই বিষয়গুলি নিয়ে কয়েক জন সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসককে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তকারীদের কথায়, সেমিনার রুমে ৯ অগস্ট দীর্ঘ ক্ষণের উপস্থিতি নিয়ে ওই ডাক্তারদের কাছে সদুত্তর মেলেনি। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, নিছক কৌতূহলের কারণে ওঁরা সেমিনার হলে গিয়েছিলেন বলে কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছেন। ওই সূত্রটি বলছে, ওই দিন সেমিনার হলে উপস্থিত সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ এক সিনিয়র চিকিৎসক আবার যুক্তি দিয়েছেন, মৃতদেহের ছবি মোবাইলে তুলে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ঠেকাতে চেষ্টা করছিলেন জুনিয়ার ও সিনিয়র চিকিৎসকের একাংশ। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তারদের কারও কারও কথার যৌক্তিকতা নিয়ে খটকা আছে। ওই ডাক্তারদের আরও জিজ্ঞাবাসাবাদ করা দরকার। হয়তো তাতে বিশেষ কিছু সূত্র মিলবে।”