আতঙ্ক হার মেনেছে পাহাড়ের টানের কাছে, প্রভাব পড়েনি বুকিংয়ে
এই সময় | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই সময়: ফোনটা রিসিভ করতেই ও দিক থেকে নিজের পরিচয় দিয়ে চিন্তিত গলায় ভদ্রলোক জানতে চাইলেন, ‘দেবাশিস চৌধুরী বলছিলাম—যোধপুর পার্ক থেকে। পুজোয় কালিম্পং যাওয়ার জন্য আপনার কাছে প্যাকেজ বুক করেছিলাম ...’ এই রে! সাত-সকালেই একটা ক্যানসেল? দিনটাই বরবাদ। কিন্তু না, ও দিকের ব্যক্তি জানতে চাইলেন, ‘টিভিতে দেখছি পাহাড়ে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে, অনেক জায়গায় ধসও নেমেছে। আমাদের যাওয়াটা আপনি বাতিল করবেন না তো?’ ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার মতো অবস্থা পর্যটন ব্যবসায়ী নন্দন বসুর।উত্তরবঙ্গের বুকিং পাওয়া নিয়ে যে পরিমাণ হুড়োহুড়ি শুরু হয়, এই বছর ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে সেই ‘পাগলামো’ যেন কিছুটা স্তিমিতই ছিল। নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর টিকিট বিক্রি দেখলে অবশ্য তা বোঝা যাবে না। জুলাইয়ে পুজোর বুকিং উইন্ডো খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অন্য বছরের মতোই সব টিকিট ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিল এ বছরও।
কিন্তু তারপর? হিমালয়ের বিভিন্ন অফ বিট লোকেশনে হোটেল বা হোম স্টে নিয়ে বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরের কাছে ঘন ঘন অনুরোধের মাত্রা সেই পর্যায়ে পৌঁছয়নি। এমনই পরিস্থিতিতে শিরে সংক্রান্তির মতোই পুজোর মুখে প্রকৃতির রোষ! পর পর টানা বৃষ্টিতে নদীগুলো কানায় কানায় ভর্তি। বেশ কিছু জেলায় বানভাসি অবস্থা। পাহাড়ে ধস। তা হলে কি শেষবেলায় উত্তরবঙ্গ থেকে মুখ ঘোরাতে শুরু করবেন পর্যটকরা?
রবিবার রাত পর্যন্ত তেমন কোনও লক্ষণ নেই দেখে অনেকটাই স্বস্তিতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে সম্রাট সান্যাল বলছেন, ‘এ বছর বুকিং শুরু থেকেই কিছুটা কম ছিল। এর অন্যতম কারণ, লাচেন প্রায় এক বছর বন্ধ, লাচুং বন্ধ গত তিন-চার মাস। এই কারণেই সিকিমের পর্যটন মার খাচ্ছে। বন্যা বা ধস এখনও প্রভাব ফেলেনি।’
একই কথা বলছেন রাজ্যের ইকো-ট্যুরিজ়ম বোর্ডের চেয়ারম্যান রাজ বসু। তাঁর মতে, ‘নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বহু জায়গায় যাওয়া যায়। ডুয়ার্সে ধস বা বন্যা—কোনও ভয়ই নেই। ফলে ওই দিকে যেতে কারও সমস্যা নেই। দার্জিলিংয়ের চিরকালীন আবেদন তো আছেই। সেখানেও কোনও প্রভাব পড়েনি।’ উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক দিন ও দিকে বৃষ্টি নেই। আকাশ ঝকঝকে, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন, ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের প্রাক্তন সম্পাদক অমিতাভ সরকার জানিয়েছেন, ভ্রমণপিপাসুরা সতর্ক—তবে আতঙ্কিত নন। তাঁরা ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন। অন্য দিকে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলছেন, ‘পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের চাপ এতটাই বেশি যে আমরা এখনও পর্যন্ত ৪০টা স্পেশ্যাল ট্রেন দিয়েছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাপ নিউ জলপাইগুড়ি এবং পুরী যাওয়ার ট্রেনগুলোতে।’ পূর্ব রেলের এই হিসেবেই স্পষ্ট—দুর্যোগের আশঙ্কার চেয়ে হিমালয়-ডুয়ার্সের আকর্ষণ অনেক বেশি।