• রাজ্যকে ভর্ৎসনা করে চিকিৎসকদের মিছিলের অনুমতি হাইকোর্টের
    এই সময় | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে ১ অক্টোবর বিকেল ৫টায় কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্রসদন পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে চিকিৎসকদের বেশ কয়েকটি সংগঠন। পুলিশের অনুমতি না মেলায় মিছিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ শর্তসাপেক্ষে মিছিলের অনুমতি দিয়েছেন। শর্ত হলো, নির্দিষ্ট রুটেই মিছিল হবে, নামাতে হবে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকও। তবে কত লোক মিছিলে যোগ দেবেন তা নির্দিষ্ট করে দেয়নি হাইকোর্ট।শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স-এর পক্ষ থেকে চিকিৎসকরা জানান, আরজি করের ঘটনায় দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রতিবাদে ১ অক্টোবর কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত মিছিল হবে। পথে নামবে ৫৫টি সংগঠন, যার মধ্যে থাকবে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টও। সাধারণ মানুষকেও এই মিছিলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় ডাক্তারদের পক্ষ থেকে। কিন্তু পুলিশ মিছিলেন অনুমতি আদৌ দেবে কি না, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

    সম্প্রতি কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন। সেখানে বলা হয়, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর শহরের নির্দিষ্ট কিছু অংশে জমায়েত করা যাবে না। আর ওই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে জোড়া মামলা। আদালতের দ্বারস্থ হয় সিপিএম এবং জয়েন্ট ডক্টর্স ফোরাম। গত শুক্রবার মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের আদালতে। সেই সময়ই ডাক্তারদের মিছিলের অনুমতির প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

    সোমবার মামলাটি হাইকোর্টে উঠলে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, 'কলেজ স্ট্রিট থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত ডাক্তারদের মিছিল হবে। কেসি দাস থেকে ভিক্টোরিয়া হাউস হয়ে বেন্টিক স্ট্রিট পর্যন্ত ১৬৩ ধারা জারি। ফলে বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে মিছিলের কোনও সংঘাত হবে না। কম লোকের অংশগ্রহণের শর্তে পুলিশ অনুমতি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু আন্দোলন আর সেই জায়গায় নেই। ডাক্তারদের মিছিলে ৫০ হাজার লোক হতে পারে বলে পুলিশকে জানিয়েছি। পাল্টা পুলিশ ১ হাজার লোক নিয়ে মিছিলের কথা বলছে। তা মানা সম্ভব নয়। বাইরে থেকে বহু মানুষ মিছিলে যোগ দিতে চাইছেন। তাঁদের কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করব?'

    এরই প্রেক্ষিতে বিচারপতি রাজ্যকে প্রশ্ন করে, 'শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কী ভাবে বন্ধ করবে পুলিশ?' রাজ্যের অবশ্য যুক্তি ছিল, '১ হাজার লোক নিয়ে যদি মিছিল করা হয় সেক্ষেত্রে কোনও আপত্তি নেই।'

    বিচারপতি ভরদ্বাজ পাল্টা বলেন, 'এক কাজ করুন গোটা শহরে আপনারা ১৪৪ ধারা জারি করুন। তাহলে কোনও আন্দোলন মিছিল, মিটিং হবে না। দুর্গাপুজো হবে না। অথচ এই শহরে আমি ৪০-৫০ বছরের কাটানো জীবনে দেখেছি মিছিল মিটিং চলে, পুলিশ নিজের মত করে তা সামাল দেয়।'

    বিচারপতি আরও বলেন, 'শহরের মানুষ যদি পথে নেমে আসে তখন কি পুলিশ বলতে পারে রাস্তায় যানজট হয়ে গিয়েছে, আপনারা বন্ধ করুন? আমিও মানছি ৫০ হাজার লোক রাস্তায় নামলে সমস্যা হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এত লোক নামলে উদ্যোক্তারা কী করবেন? সুরক্ষা তো পুলিশের কাজ।' রাজ্য পাল্টা আদালতে বলে, 'আমরা কাউকে নিষেধ করছি না। আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছি।'

    বিচারপতি ভরদ্বাজ বলেন, 'কোনও মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে মিছিলে হাঁটলে তাঁকে কে নিষেধ করবে? পুলিশ নাকি ডাক্তাররা? না কি বাইরের লোক ঢুকেছে দেখে ডাক্তাররা মিছিল বন্ধ করে দেবেন? বাস্তবটা দেখার চেষ্টা করুন।'

    মিছিলে কত লোক হবে তা কী ভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দাজ করা সম্ভব? প্রশ্ন করে রাজ্য। বিচারপতি বলেন, 'দুর্গাপুজোয় কত ভিড় হবে তা কী ভাবে আন্দাজ করে পুলিশ? গত বছর সুরুচি সংঘে দেখেছি পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবীরা দাঁড়িয়ে থেকে হাজার হাজার লোকের ভিড় সামলেছে। তা কী ভাবে হচ্ছে?'

    এ দিন আদালত চিকিৎসকদের ১ তারিখের মিছিলের অনুমতি দেয়। তবে নির্ধারিত রুটেই মিছিল করতে হবে বলে নির্দেশ আদালতের। তবে কত সংখ্যক লোক নিয়ে এই মিছিল হবে? সেই সংখ্যা বেঁধে দেয়নি আদালত।
  • Link to this news (এই সময়)