• উন্নয়নের ঠেলা, ধস আরও বাড়ারই আশঙ্কা পাহাড়ে
    এই সময় | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: ভূমিধস ফের চিন্তা বাড়িয়েছে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায়। ধসের কারণে প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকা। যদিও পাহাড়ি এলাকায় ধস নতুন নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ি এলাকায় নতুন বিপদ হলো পর পর ধসের ঘটনা। আগে বড় ধস কালেভদ্রে ঘটত। এখন সেই বিপর্যয় ফি বছর ঘটছে, বার বার ঘটছে। সে কেরালার ওয়েনাড় হোক বা উত্তরবঙ্গের মিরিক কিংবা সিকিমের সিংথাম।বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আগামী দিনে এই প্রবণতা বাড়বে, বিশেষত উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে। কারণ, সেখানে কঠিন বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা বলে কিছু নেই। পাহাড়ের ঢালে জমিয়ে রাখা জঞ্জাল পাহাড়ের মাটি আলগা করছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে দেদার প্লাস্টিকের ব্যবহার। আগে যে গাছগুলি মাটি ধরে থাকত, ভূমিধসের কারণে সেই বনাঞ্চল কমছে দ্রুত। আর আছে উন্নয়নের নামে বেপরোয়া কাজকর্ম।

    বিজ্ঞানীমহলেরও বক্তব্য, পাহাড়ের ভূমিধসের বড় কারণ এই তথাকথিত উন্নয়ন। এক দিকে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি, বৃক্ষনিধন, অন্য দিকে পাহাড়ের বুকে বিদ্যুৎ-প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। সে কারণে উত্তরবঙ্গ লাগোয়া সিকিমে ধস বাড়ছে। ঝাপটা সইতে হচ্ছে উত্তরবঙ্গকেও। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) প্রকাশিত ‘ল্যান্ডস্লাইড অ্যাটলাস’-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ধসপ্রবণ এলাকাগুলির মধ্যেই পড়ে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চল।

    ২০২১-এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, পাহাড়ি এলাকায় যত ভূমিধস হয়, তার ৫৯ শতাংশই বনাঞ্চল বা চা-বাগান এলাকায়। ২০২২-এর আর একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ১৯৫০ থেকে ২০১৮-র মধ্যে হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কেরালা, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে ৫০-৬২ শতাংশ বনাঞ্চলই ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছে। ওই গবেষণাতেই বলা হয়েছিল, জঙ্গল ধ্বংস হওয়ার কারণে পাহাড়ের মাটি ক্রমাগত আলগা হচ্ছে।

    পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি নতুন নয়। কিন্তু বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার জন্যে, সেনাবাহিনীর সুবিধার জন্যে নিত্যনতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে। রাস্তা তৈরির পুরো কাজই হয় যন্ত্রে। যন্ত্র দিয়ে পাথর কাটার দরুণ পাহাড়ে প্রবল কম্পন হয়। ফলে আরও আলগা হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের মাটি।

    দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াংয়ের মতো শহরে সেই অর্থে কঠিন বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা বলেও কিছু নেই। উল্টো দিকে এই সব শহরে জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পর্যটকদের চাপও। কিন্তু বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, দার্জিলিং শহরের বাইরে পাহাড়ের ঢালে জমিয়ে রাখা হচ্ছে পুর-এলাকার জঞ্জাল। বৃষ্টির জলে সেই জঞ্জাল গড়িয়ে এসে মিশছে মাটিতে। তার মধ্যে থাকছে প্রচুর প্লাস্টিক।

    সেই আবর্জনার উপরে গত এক দেড় দশকে পড়েছে মাটির পরত। কিন্তু প্লাস্টিকের কারণে সেই মাটি জমাটই বাঁধতে পারেনি। ফলে বৃষ্টির জল মাটির নীচে প্রবেশ করলেই ধস নামছে। ধসের অভিঘাত এতটাই বেশি যে ধসে পড়ছে বনাঞ্চল। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলা বিচারাধীন। প্রাথমিক ভাবে আদালত এই বিষয়ে এক গুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে। সেগুলি কঠোর ভাবে মানা হলে ধস ঠেকানো যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
  • Link to this news (এই সময়)