• পাশে দাঁড়ায়নি সরকার! বাঘে খাওয়া ৪৫০ স্বজনহারা পরিবারের পাশে এই মানুষটি...
    ২৪ ঘন্টা | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • প্রসেনজিত্‍ সরদার: প্রায়ই খবর এসে থাকে সুন্দরবনে কেউ না কেউ বাঘের কবলে পড়েছে। সেই স্বজনহারা পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ালেন বাসন্তীর এক প্রাক্তন শিক্ষক। জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত সুন্দরবনে প্রায় ৪৫০ বাঘে খাওয়া পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন বাসন্তীর প্রাক্তন শিক্ষক। 

    উল্লেখ্য সুন্দরবনে বাঘে খাওয়া অসহায় পরিবারগুলির জন্য সামান্যতম সাহায্যের হাত বাড়াননি কেউই কিংবা তাঁদের খোঁজও রাখেন না কেউই। বিধবা মা কিংবা তাঁদের সন্তানদের জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনও সংস্থা এগিয়ে আসেননি অথবা কোনও অনুদান সাহায্য পায়নি। সেইসব পরিবারের বিধবা মা ও তাঁদের অসহায় সন্তানদের কথা চিন্তা করে তাঁদের পরিবারের পাশে ধারাবাহিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন সুন্দরবন টাইগার অ্যাফেকটেড ফ্যামিলির কর্ণধার শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত প্রাক্তন শিক্ষক তথা সমাজসেবী অমল নায়েক। 

    সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের শিবগঞ্জের অমল নায়েককে এলাকার মানুষ এক বাক্যেই অমল স্যার নামেই চেনেন এবং জানেন। সুন্দরবনের বাসন্তী হাইস্কুলের প্রাক্তন ইংরেজি শিক্ষক অমল নায়েক অনুভব করেছিলেন, পেটের খিদের করুণ জ্বালা মেটাতে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের জঙ্গলে, নদী খাঁড়িতে মধু,মাছ,কাঁকড়া সংগ্রহ করতে গিয়ে যেভাবে বাঘের আক্রমনে মারা গিয়েছেন কিংবা বাঘের খাদ্যে রুপান্তরিত হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি তরফ থেকে কোনওরুপ ক্ষতিপূরণ পাননি এই সব বাঘে আক্রান্ত পরিবারগুলি। পেটের তাগিদে সংসারের হাল ধরতে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের পেটে গিয়েছেন গৌর, মঙ্গল, উত্তম, হরিপদ’রা। একের পর এক বাঘের পেটে যেতে যেতে এক সময় বিধবা গ্রামে তৈরি হয়ে গিয়েছে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের গোসাবায়। স্বামীকে হারিয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত বিধবা মায়েরা। এমনকি সংসারের জোয়ালের চাপে অনেকের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

    তাই পুজোর প্রাক্কালে বাসন্তীর শিবগঞ্জে চম্পা মহিলা সোসাইটিতে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ব্যাঘ্র বিধবা মায়েদের কে জীবন্ত দূর্গা চিন্ময়ী রূপে বরণ করে মিষ্টি মুখ করানো হয়। পরে সেই সমস্ত অসহায় হতদরিদ্র ৪৫০ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বস্ত্র, মশারি-সহ পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী। 

    মৎস্যজীবি বিধবা মায়েদের দাবি, বাঘের আক্রমণে আর কত মৃত্যু মিছিল চলবে? সরকারকে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, সুন্দরবনকে বাঁচাতে মাষ্টার প্লান তৈরি করতে হবে। সুন্দরবনের নদী বাঁধ রক্ষা করতে হবে। বাঁচাতে হবে বন্যপ্রাণ। এবং আমাদের মতো অসহায়দের জন্য ছাদ যুক্ত পাকা বাড়ি তৈরি করে দিতে হবে। 

    সমাজসেবী অমল নায়েক বলেন, 'পরিবারের একমাত্র উপার্জকারীর অকাল মৃত্যু হলে সেই পরিবারের যে কি হাল হয়, তা স্বচক্ষে উপলব্ধি করেছি। তাই প্রত্যন্ত সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের আক্রমনে যে সমস্ত পরিবারগুলি অনাথ হয়ে গিয়েছে তাঁদের পাশে সামান্যতম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করেছি। আগামী দিনে যাতে আরও বেশী সংখ্যক অসহায় বাঘে খাওয়া পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারি তার চেষ্টা করব।' অসহায় বাঘে খাওয়া বিধবা মা এবং তাঁদের সন্তান’রা বলেন, 'শিক্ষক অমল বাবু সবসময় যেভাবে আমাদের পরিবারগুলিকে সাহায্য, সহযোগিতা করেন তা অতুলনীয়, তিনিই আমাদের অন্তরাত্মা।  তিনি পাশে না দাঁড়ালে আমরা হয়তো প্রাণে বাঁচতাম না। তিনি আমাদের হৃদয় জুড়ে চিরস্মরনীয় থাকবেন।'

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)