ঠাকুর দেখার অছিলায় চুরি, ছিনতাইয়ের জন্য পাওয়া যায় ‘পুজোর ইনসেনটিভ’! আবার সক্রিয় ‘বিচ্ছু গ্যাং’
আনন্দবাজার | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্যান্ডেলের কয়েক মিটার আগে রাস্তাই তাদের ‘টার্গেট পয়েন্ট’। মণ্ডপের বাইরে ক্যাপ বন্দুক নিয়ে হুড়োহুড়ি নয়, ভিড়ে ঠাসা মণ্ডপ কিংবা ভিড়বাজারেই তাদের ‘দস্যিপনা’। একটু অন্যমনস্ক হলেই বিপদ। চোখের পলকে পকেট থেকে উধাও হয়ে যেতে পারে পার্স এবং মোবাইল ফোন। পুজোর সপ্তাহখানেক আগে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর এবং লালবাগ জুড়ে ‘বিচ্ছু গ্যাং’-এর হাতসাফাইয়ে তটস্থ পুজোর বাজারে বেরনো মানুষজন। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, মোবাইল চুরি করতে দক্ষ এই খুদেদের পরিচালনা করছে বড় কোনও অপরাধ চক্র।
দমদম, উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুর, বেলঘরিয়া রেললাইনের দুই পাশের বস্তি এলাকা থেকে ১২ থেকে ১৬ বছরের ছেলেদের নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি অপরাধচক্র। মূলত মোবাইল চুরি ও কেপমারিতে এদের ‘দক্ষতা’। কথাবার্তায় এরা পটু। হাতসাফাইয়ের কাজে চোস্ত। পুলিশ নাম দিয়েছে, ‘বিচ্ছু গাং’। উৎসবের মরসুমে এদের কাজকারবার বেড়ে যায়। এ বার দুর্গাপুজোয় মুর্শিদাবাদ এবং জগদ্ধাত্রী পুজোর কৃষ্ণনগর শহরে নজর খুদে পকেটমারদের। ভিড়কে কাজে লাগিয়ে মোবাইল, পার্স ইত্যাদি ‘হাওয়া’ করছে তারা । যদিও এদের মূল পাণ্ডা হিসাবে উঠে আসছে অপরাধ জগতের কুখ্যাতদের নাম। গত দু’বছর ধরে এদের কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন পুলিশ। সম্প্রতি কয়েক জনকে পাকড়াও করা হয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে শহরের চার-পাঁচটি পুজো মণ্ডপকে টার্গেট করেছে খুদে পকেটমারের দল। তা ছাড়াও পুজোর বাড়তি ভিড় থাকায় ট্রেন, বাসেও হাতসাফাইয়ের কাজ করে এরা। খুদেরা মোবাইল, টাকা-পয়সা চুরি করলেও নিজেরা সেগুলো রাখে না। সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে তাদের কাজে নামায় চক্র। এক একটি সফল ‘অপারেশন’ পিছু ‘বিচ্ছু গ্যাং’-এর হাতে ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্তও দেওয়া হয়। তা ছাড়া চুরি করা মোবাইলের মূল্যের উপর নির্ভর করে এদের পারিশ্রমিক। আর ‘অপারেশন’ ব্যর্থ হলে কিংবা পুলিশের হাতে ধরা পড়লে আইনজীবী জোগাড় করা থেকে ছাড়িয়ে আনার নেপথ্যে আছে বড় মাথা। অনেকটা কর্পোরেট কায়দায় দল পিছু টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়। পকেটমারি, হাতসাফাইয়ে ‘ভাল পারফরম্যান্স’ দেখাতে পারলে মেলে ‘ইনাম’।
পুলিশ জানাচ্ছে, অল্পবয়সি হওয়ায় ভিড়ের মধ্যে সহজে মিশে যেতে পারে ‘বিচ্ছু গ্যাং’। অনেক ক্ষেত্রে এরা ধরা পড়ে। তবে ‘বাচ্চা’ বলে ছেড়ে দেন অনেকে। কিন্তু খুদেদের ‘প্রশিক্ষণ’ দিয়ে তৈরি করা হয়। গত বছরই মুর্শিদাবাদ জেলায় উৎসব চলাকালীন ৭০টিরও বেশি মোবাইল চুরির অভিযোগ পায় বিভিন্ন থানা। সে বারও বেশ কয়েক জন কিশোর ধরা পড়েছিল। তবে বয়স কম থাকার কারণে সহজে জামিন পেয়ে যায় অভিযুক্তেরা। এ বার পুজোতেও সক্রিয় ওই চক্র। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, মোবাইল চুরি যাওয়ার ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান মিলেছে। তদন্তে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তবে ওই চক্রের গতিবিধি পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাজিদ ইকবাল বলেন, ‘‘পুজোর সময় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পকেটমারি, চুরি ইত্যাদি আটকানোর জন্য সাদা পোশাকেও পুলিশ ঘোরাফেরা করবে। অল্পবয়সিদের ব্যবহার করে অপরাধমূলক কাজ করা হচ্ছে, এ খবর আমাদের কাছে রয়েছে। সেটা আটকাতেও বাড়তি ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।’’