জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে মৃৎশিল্পকেই পেশা করবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দেবরাজের
বর্তমান | ০১ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, সিউড়ি: বছর কয়েক আগে বাবা মারা গিয়েছেন। বাড়িতে মা আর ছোট বোন। চূড়ান্ত দারিদ্রকে সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধে নেমেছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দেবরাজ বাগদি। পড়াশোনার পাশাপাশি সংসার টানতে প্রতিমা গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছে দুবরাজপুর সাত কেন্দুলির বাসিন্দা দেবরাজ।
দুবরাজপুরের আশ্রম মোড়ের কাছে সাধন হাজরার মৃৎশিল্পালয়ে কাজ শিখছে সে। বেতন প্রতিদিন দেড়শো টাকা। বিশ্বকর্মা, দুর্গা, কালী সহ নানা প্রতিমা গড়ার কাজে শিল্পীদের সাহায্য করছে সে। একই সঙ্গে রপ্ত করছে প্রতিমা গড়ার কৌশল। লক্ষ্য, বর্তমানে সংসারের অনটন ঠেকানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে পুরোদস্তুর মৃৎশিল্পী হওয়া।
জেলার বিভিন্ন শহর ও গ্রামাঞ্চলে মৃৎশিল্পীরা এই বলে আক্ষেপ করছেন যে, বর্তমান প্রজন্ম মৃৎশিল্পের পেশায় আসতে আগ্রহ হারাচ্ছে। ঠিক তখনই দেবরাজ দক্ষ মৃৎশিল্পী হয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যা এই শিল্পের ক্ষেত্রে আশার কথা। তাঁর এই পদক্ষেপ আধুনিক প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে পারে। মৃৎশিল্পীদের আরও অভিযোগ, দিনের পর দিন তাঁদের রোজগার কমে যাচ্ছে। শিল্পের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর সামর্থ্য না থাকলে কোনও সরকারি সাহায্য মেলে না। পুজোর আগে বিপুল সংখ্যক প্রতিমা তৈরির বরাত নিলেও পুঁজির অভাবে অনেকেই সুদের কারবারিদের থেকে টাকা নিয়ে প্রতিমার বরাত রক্ষা করেন। সেই জায়গায় নতুন করে দেবরাজ এই পেশায় আগ্রহ দেখানোয় পুরনো শিল্পীরাও উৎসাহ পাচ্ছেন। দেবরাজ বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর উচ্চশিক্ষা অবশ্যই নেব। কলেজে ভর্তি হব। কিন্তু সেই সঙ্গে মাটির প্রতিমা তৈরি কাজটাও শিখে রাখছি। কারণ আজকের দিনে পড়াশোনা করেও ভালো চাকরি পাওয়া দুষ্কর। আমাদের পরিবারে আমিই প্রথম এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। এখন পুজোর আগে পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজ করে যে মজুরিটুকু পাচ্ছি তা দিয়ে আমাদের সংসার খরচ চলে যাচ্ছে। আগামী দিনে এই শিল্পকে পেশা হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছে আছে। -নিজস্ব চিত্র