দূরত্ব সম্পর্কে ধারণা করাটাও কঠিন। পৃথিবীর আকাশে উঁকি দিয়ে যাওয়া ধূমকেতুদের বেশির ভাগ যে জায়গা থেকে আসে বলে মনে করা হয়, ধূমকেতুদের সেই ‘আঁতুড়ঘর’ পৃথিবী থেকে ঠিক কতটা দূরে? মহাকাশবিজ্ঞানীদের বক্তব্য, প্রাথমিক ধারণায় বলা যায়, ধূমকেতু আসে প্লুটোরও বহু দূর থেকে। তার নাম, মহাকাশবিজ্ঞানীদের পরিভাষায় ‘উর্ট কমেট ক্লাউড’।এতটাই দূরে সে জায়গা যে, সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার বেগে ছুটতে থাকা ওই তল্লাট থেকে আলোর সূর্য পর্যন্ত আসতেই ২ বছরের কাছাকাছি সময় লেগে যায় ধূমকেতুর। ১৯৭৭ সালে পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে পাড়ি দেওয়া ভয়েজার-১ এখন যে গতি চলছে, সেই গতিতে এগোতে থাকলে আরও ৩০০ বছর পর তার উর্ট কমেট ক্লাউডে পৌঁছনোর সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হয়।
কল্পনারও বাইরে থাকা এমনই এক দূরত্ব পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর কাছ দিয়ে ঘুরে গেল ধূমকেতু সি/২০২৩ এ-থ্রি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতোই টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে বসেছিলেন এখানকার শখের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সংগঠন স্কাই ওয়াচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। ওঁদের ক্যামেরায় ধরা পড়ল অত্যন্ত বিরল এই ধূমকেতু।
রাতভর আকাশে টেলিস্কোপ তাক করে বসে ভোরের দিকে উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ার যে তৃপ্তি, সেটাই পেলেন সৌভিক কর্মকার। সুন্দরবনের কৈখালির কাছে স্কাই ওয়াচার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সি/২০২৩ এ-থ্রি পর্যবেক্ষণ আর তার ছবি তোলার জন্য বিশেষ একটি ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছিল।
স্কাই ওয়াচার্স অ্যাসোসিয়েশনের দীপঙ্কর দে বলছেন, ‘২০২৩-এর ৯ জানুয়ারি প্রথম এই ধূমকেতুর খোঁজ পাওয়া যায়। এই ধূমকেতুকে ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম বলা যায়। কারণ, হিসেব বলছে, এই ধূমকেতু যদি আবার ফিরে আসে, তা হলে ফিরবে ৮০ হাজার ৬৬০ বছর পর!’ দীপঙ্করের কথায়, ‘অতীতে যদি ধূমকেতুটি এই নিয়ম মেনে এসে থাকে, তা হলে সে এসেছিল প্রায় ৮১ হাজার বছর আগে। তখনও পৃথিবীতে আজকের মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্স আসেনি।’