এই সময়, কামারহাটি: সল্টলেকের স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না আন্দোলন উঠেছে সপ্তাহ খানেক আগে। তবে ওই ধর্না চলাকালীনই সেখান থেকে পাখা, বাঁশ, ত্রিপল খুলে ফেলছিল সংশ্লিষ্ট ডেকরেটর সংস্থা— এমন অভিযোগ উঠেছিল। প্রায় একই ছবি সোমবার দেখা গেল কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে।এক রোগীর পরিজনদের হাতে মহিলা চিকিৎসক ও নার্সের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে গত শুক্রবার রাত থেকে সেখানকার জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। হাসপাতাল চত্বরেই মঞ্চ বেঁধে চলছে ধর্না। সোমবার সেই কর্মবিরতি চতুর্থ দিনে পড়ল। এ দিন বিকেলে আচমকাই ডেকরেটর্সের লোকজন এসে আলো, পাখা, সাউন্ডবক্স খুলে গাড়িতে তুলতে থাকেন।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, তাঁদের আন্দোলনে ভয় পেয়ে ডেকরেটর্স সংস্থাকে চাপ দিয়ে এই সব সামগ্রী খুলে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও এরপরে হাসপাতালের সুপার এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শেষমেশ ওই সব আলো, পাখা, বক্স ফেরত দিয়ে যায় ডেকরেটর্স সংস্থাটি।
এই গোটা ঘটনা পরম্পরার পিছনে চক্রান্ত দেখছেন আন্দোলনকারীদের বড় অংশ। অনেকেই আবার স্বাস্থ্যভবনের সামনের ঘটনার সঙ্গে মিল দেখতে পাচ্ছেন। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সবক’টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই মঞ্চ করে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সাগর দত্তেও একই ভাবে প্রতিবাদ চলছিল। মাঝে কয়েকদিন আংশিক কর্মবিরতি বাদ দিলে গত শুক্রবারের ঘটনার পরে ফের ওই একই মঞ্চে অবস্থানে বসেন সেখানকার জুনিয়র চিকিৎসকরা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, রবিবার পর্যন্ত ডেকরেটর্স সংস্থার যা পাওনা ছিল, তা পেমেন্ট করা হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকার উপরে পেমেন্ট করা হয়েছে। তা হলে কেন আচমকা কাউকে কিছু না জানিয়ে মঞ্চের সামগ্রী খোলা হচ্ছিল? সেটা কি আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই? আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে কুণাল ধর বলেন, ‘আসলে আমাদের আন্দোলনে কেউ বা কারা হয়তো ভয় পেয়েছে। তারাই হয়তো আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করেছে।’
আর এক জুনিয়র চিকিৎসক অর্জুন মুন্ডা এতদিন ডেকরেটর্স সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন। তাঁর কথায়, ‘ওদের পেমেন্ট ঠিকঠাকই করা হয়েছে। কোনও বিষয় নিয়ে বাদানুবাদও হয়নি। বিকেলে আমরা আলাদা মিটিং করছিলাম। আমাদের কিছু না জানিয়ে আচমকা ডেকরেটর্সের লোক পরিচয় দিয়ে লাইট, ফ্যান, সাউন্ড বক্স খুলতে থাকে। আমরা জিজ্ঞেস করতে গেলে কোনও উত্তরই দিচ্ছিল না ওরা।’
তিনি অবশ্য বলেন, ‘না জানিয়ে পাখা, আলো খোলা ভুল হয়েছে। আমার ভাই ইমরান খুলতে এসেছিল। আসলে আমাদের অন্য জায়গায় অর্ডার নেওয়া রয়েছে। সেজন্যই তা খোলা হয়েছিল। কারও চাপে নয়।’ শেষে আটটি পাখার মধ্যে চারটি পাখা, আলো, সাউন্ডবক্স আবার ইনস্টল করে দেওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা আরও চারটি পাখা নিজেরা কিনে এনে অবস্থান মঞ্চে লাগানোর ব্যবস্থা করেন।
হাসপাতালের সুপার সুজয় মিস্ত্রি বলেন, ‘যদি কেউ কিছু ভাড়ায় দেয়, তা আচমকা খোলা যায় নাকি? আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা আমার কাছে এসেছিলেন। আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখার জন্য আমি কামারহাটি থানার পুলিশকে অনুরোধ করি। শুনেছি, পরে আবার পাখা, আলো ইনস্টল করা হয়েছে।’