এই সময়: দক্ষিণবঙ্গে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অনেক জায়গায় এখনও জল জমে রয়েছে। এর মধ্যে আবার ভারী বৃষ্টি ও ধসে অবস্থা বেহাল দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়িরও। পুজোর সময়েও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এই পরিস্থিতিতে পুজোর থেকে জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশি জোর দিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।ইতিমধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বন্যা পরিস্থিতি মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঘুরে দেখে এসেছেন। রবিবার উত্তরবঙ্গে গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকও করেছেন। সোমবার কলকাতায় ফিরে বিকেলে নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন মমতা। সূত্রের খবর, সেখানে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পুজোর পাশাপাশি বন্যার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে মন্ত্রীদের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি হয়েছে, সেই মন্ত্রীদের উদ্দেশে তাঁর নির্দেশ, পুজোর চেয়ে বেশি করে বন্যায় নজর দিন। এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে। যে সমস্ত এলাকায় এখনও বন্যা হয়নি, সেখানকার মন্ত্রীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহের উপর জোর দিতে হবে।
এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরই মুখ্যমন্ত্রী দক্ষিণবঙ্গের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেন। সেখানে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম এবং দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও পুলিশ কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও বন্যা পরিস্থিতি, ত্রাণ বণ্টন ও পুজোর নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
পরে মুখ্যসচিব জানান, হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনার বন্যা কবলিত বহু এলাকায় এখনও জল জমে রয়েছে। পুজোর আগে নতুন করে বৃষ্টি এবং ডিভিসির জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে দিকে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। নিচু এলাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের ত্রাণ শিবিরে রাখতে বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সামনে দুর্গাপুজো। উৎসবের সময়ে বিভিন্ন এলাকা স্বাভাবিক অবস্থায় না ফেরা পর্যন্ত ত্রাণ সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, ‘ত্রাণ সামগ্রী কোনও ভাবেই আটকে রাখা যাবে না। সরকারের তরফে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। আমার কাছে ত্রাণ নিয়ে যেন কোনও অভিযোগ না আসে।’ জেলাশাসকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘তোমরা কিন্তু ত্রাণ আটকে রাখবে না। অনেক দুঃস্থ-গরিব পরিবার রয়েছে। বন্যার জন্য অনেকেই জামাকাপড় কিনতে পারেননি। তাঁদের প্রয়োজনে জামাকাপড় দেবেন আপনারা। বন্যার জন্য কোনও পুজোর যদি সমস্যা হয়, তা হলে ক্লাবগুলিকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের মণ্ডপের স্থান বদল করতে হবে।’
এ দিনের বৈঠকে পুজোর সময়ের আইন-শৃঙ্খলারক্ষা নিয়েও জেলাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘পুজোয় আইন-শৃঙ্খলার যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকে বিশেষ নজর রাখুন। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি নজরে রাখতে হবে।’ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারকে আলাদা ভাবে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। পুজো কার্নিভালের প্রস্তুতিও নিতে বলা হয়েছে বৈঠকে।