• বাসের ২ বছর মেয়াদবৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে হাই কোর্টে মামলা, শুনানি হতে পারে মঙ্গলবার
    আনন্দবাজার | ০১ অক্টোবর ২০২৪
  • বাসের বয়সসীমা বাড়িয়ে ১৫ থেকে ২০ বছর করার আবেদন জানিয়ে এ বার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা। সব ঠিকঠাক থাকলে মঙ্গলবার হতে পারে শুনানি। বেশ কিছু দিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছিল জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং দফতরের সচিব সৌমিত্র মোহনের কাছে এ বিষয়ে একাধিকবার দরবারও করেছিল তারা।

    উল্লেখ্য, পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট ২০০৯ সালে এক নির্দেশে বলেছিল, কলকাতার পরিবেশ বাঁচাতে কেএমডিএ-র আওতাভুক্ত এলাকায় ১৫ বছরের বয়সসীমার ঊর্ধ্বে কোনও বাস চালানো যাবে না। আদালতের সেই নির্দেশ কার্যকর করতে অগস্ট মাসের ১ তারিখ থেকে বাস বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে পরিবহণ দফতর।

    কিন্তু বেসরকারি বা সংগঠনগুলির দাবি ছিল, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে যে লকডাউন হয়েছিল তাতে পরিবহণ শিল্প বেহাল হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে বেশি সংখ্যায় বাস রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হলে নতুন বাস রাস্তায় নামানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। বর্তমানে পরিবহন শিল্পের যা অবস্থা, তাতে বাস মালিকরা মোটা টাকা কিস্তি দিয়ে রাস্তায় বাস নামানোর অবস্থায় নেই। তা ছাড়া যে বাসগুলি কোভিডের জন্য চলতে পারেনি তার মেয়াদ দু’বছর বাড়ানো হোক। পরিবহণ দফতরে আবেদনও করা হয়।

    পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ১৫ বছরের মেয়াদ পেরনো গাড়ি বা বাস কলকাতা শহরে চালানো যাবে না। তাই বেসরকারি বাস সংগঠনগুলির দাবি মানা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। পরিবহণ দফতরের এমন মনোভাবের কথা জানার পরেই আদালতে যাওয়ার বিষয় মনস্থির করে বেসরকারি বাস সংগঠনটি। ‘গণ পরিবহণ বাঁচাও কমিটি’ নাম দিয়ে পরিবহণমন্ত্রীর পাশাপাশি পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনটি বাস সংগঠনের নেতারা। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট, জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বেসরকারি বাসের মেয়াদ দু’বছর বৃদ্ধি করার আবেদন জানায়। করোনার জেরে আর্থিক সমস্যার পাশাপাশি সংগঠনের তরফে বলা হয়, বর্তমানে একটি ডিজেল চালিত বাস রাস্তায় নামাতে গেলে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। আর ইলেকট্রিক চালিত বাস কিনতে গেলে দাম পড়তে পারে ৬০-৬৫ লক্ষ। করোনা জেরে আর্থিক ধাক্কা খাওয়া বাস মালিকদের পক্ষে আগামী কয়েক বছরে এত বড় বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।

    বেসরকারি বাস সংগঠনগুলির দাবি, ১ অগস্ট থেকে হাজার খানেক বাস রাস্তা থেকে ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, ‘‘অগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মাত্র ১৫৭টি বেসরকারি বাস বাতিল হবে। তাই বেসরকারি বাসমালিকেরা যে দু’-আড়াই হাজার বাস বাতিলের কথা বলছেন, তা আদৌ সত্যি নয়।” তাঁর আরও দাবি ছিল, ‘‘গত পাঁচ বছরে বিকল্প পরিবহণ পরিষেবা দিতে শহরে কমপক্ষে এক হাজার গাড়ি নেমেছে। এ ছাড়াও প্রায় ৭০ হাজার অ্যাপ ক্যাবও রাস্তায় চলে। তাই সাধারণ যাত্রীদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।”

    পরিবহণমন্ত্রীর এমন দাবি মানতে চাননি জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পরিবেশ দফতর কেবল আদালতের নির্দেশের কথা উল্লেখ করছে। আমরা যে দু’বছরের জন্য বাসের মেয়াদ বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম, সেই বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া উচিত ছিল পরিবহণ দফতরের। কিন্তু রাজ্য সরকার এই পদ্ধতিতে বাস মালিকদের পাশে না দাঁড়িয়ে বাস বাতিল করতে উদ্যত হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা নিরুপায় হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আশা করব, পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি পরিবহণ শিল্পের বর্তমান আর্থিক অবস্থার কথা বুঝে আদালত আমাদের দাবি বিবেচনা করবে।’’ তবে পরিবহণ দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী ও আধিকারিকদের নিয়ে নবান্নে বৈঠকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)