এই সময়, কলকাতা ও নয়াদিল্লি: আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে উঠে এল প্রায় দু’দশক আগে চিকিৎসক চন্দন সেনের খুনের প্রসঙ্গ। রানাঘাটের ওই চিকিৎসকের জলে ডুবে রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় খুনের অভিযোগ ওঠে। সেখানেও সরকারি হাসপাতালে জাল ওষুধ চক্রের অভিযোগ উঠে এসেছিল। সোমবার শীর্ষ আদালতে আরজি করের ঘটনার শুনানি চলাকালীন সেই ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন মামলাকারীদের তরফে অন্যতম আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি।রাজ্যে বাম আমলে ওষুধ দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে এডুলজি সওয়াল করেন, দু’দশক আগে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বহাল ছিল জাল ওষুধ চক্র৷ সেই চক্রের হাল-হকিকত জেনে যাওয়াতেই ২০০৩-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি খুন হতে হয়েছিল চিকিত্সক চন্দন সেনকে। সিজেআই ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে এডুলজির দাবি, ‘২১ বছর আগে চিকিত্সক চন্দন সেনের রহস্যমৃত্যুর ঘটনাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। সেই সময়েও বাংলাদেশ-যোগ উঠে এসেছিল।’ আরজি করের ঘটনার পিছনেও পড়শি দেশে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা-বর্জ্য পাচারচক্রের যোগ থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন ওই আইনজীবী। তাঁর দাবি, এ নিয়েও সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়ে দেন, এখন আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই৷ পাশাপাশি আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টিও তারা তদন্ত করছে। পরবর্তী সময়ে তারা খতিয়ে দেখবে, রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে এই খুনের ঘটনার কোনও যোগ আছে কি না৷ তখন এই নিয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন।
ঠিক কী হয়েছিল চন্দন সেনের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায়?
২০০৩-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি, নদিয়ার রানাঘাট থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নোকারিতে হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক চন্দন সেন। তাঁর সঙ্গে ওই বাড়িতে আমন্ত্রিত ছিলেন রানাঘাট হাসপাতালের আরও তিন চিকিৎসক শুভরঞ্জন খাঁড়া, তাঁর স্ত্রী অরুন্ধতী খাঁড়া ও রহমত এ আলম। রাত ১১টা নাগাদ সুনীলের বাড়ি থেকে কয়েক হাত দূরে পুকুরে চন্দনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
অতিরিক্ত মদ খাওয়ার কারণে পুকুরে পড়ে যাওয়ার তত্ত্ব পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এক প্রবীণ আইনজীবী জানান, ওই দিন পুলিশ রানাঘাট হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভে তা কলকাতায় করাতে বাধ্য হয় পুলিশ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ময়নাতদন্তের পরে জানা যায়, চন্দনকে খুন করা হয়েছে। খুনের মামলায় তিন চিকিৎসক ছাড়াও যাঁর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে চন্দন মারা গিয়েছিলেন, সেই অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সুনীল ও তাঁর ছেলে গৌতমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অভিযোগ ওঠে, রোগীদের জন্যে যা ওষুধ আসত, তার বেশির ভাগটাই পিছনের দরজা দিয়ে বিক্রি করে দিত হাসপাতালের একটি চক্র। সৎ এবং গরিব-দরদি বলে পরিচিত চন্দন ওই চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাতেই তাঁকে খুন করা হয় বলে দাবি। নিম্ন আদালত কয়েকজন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দিলেও পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট থেকে তাঁরা বেকসুর খালাস হন।