ধীমান রায়, কাটোয়া: দুর্গাপুজোর চেকবিলির অনুষ্ঠানে বেফাঁস ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী। বললেন, “মনে রাখবেন, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী পুজোর জন্য অনুদান দিচ্ছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর ছবি যেন প্রতিটি প্যান্ডেলে থাকে। যাদের মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টাঙাতে অসুবিধা, তাদের অনুদানের টাকাটা না নেওয়াই উচিত।” এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে নিন্দার ঝড়।
সোমবার ভাতার থানা এলাকার সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ক্লাব ও পুজো কমিটিগুলোর হাতে সরকারি অনুদানের ৮৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। ভাতার থানার পুলিশের পক্ষ থেকে এই সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দোপাধ্যায়, ডিএসপি (ক্রাইম) সুরজিৎ মণ্ডল, সি আই (এ) শৈলেন্দ্র উপাধ্যায়। এছাড়া ছিলেন ভাতারের বিডিও দেবজিৎ দত্ত, ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত এবং পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোঁয়ার। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বিডিও এবং ভাতার থানার ওসি বক্তব্য রাখার পর বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের পাশে বসিয়েই বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী সরকারি অনুদানের চেক নিতে আসা ক্লাব ও পুজো কমিটি গুলির কর্মকর্তাদের চাঁচাছোলা ভাষায় জানিয়ে দেন, সরকারি অনুদান নিলে মণ্ডপে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টাঙাতে হবে।
বিধায়কের কথায়, “এই অনুদান মামনীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে নিচ্ছেন। এটা সরকারি টাকা। তাই অনুদানের টাকা নিলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টাঙাতে হবে। অনেক ক্লাব তো টাকা নিচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি না টাঙালে অনুদান না নেওয়াই ভালো।” শেষে অবশ্য বিধায়ক বলেন, “এটা আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতার থানা এলাকায় এবছর মোট ১৬২ টি পুজো কমিটিকে দুর্গাপুজোর অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে এদিন ভাতার থানায় ৭৪ টি পুজো কমিটির হাতে সরকারি অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিন বিধায়ক যখন এই মন্তব্য করছিলেন তখন পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের কিছুটা অপ্রস্তুত ভঙ্গিমায় দেখা যায়। যদিও তাঁরা কেউই এনিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
বিধায়কের মন্তব্য নিয়ে জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোঁয়ার বলেন, “বাংলার দুর্গাপুজো বিশ্বনন্দিত। আর এই ঐতিহ্যের মর্যাদারক্ষায় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই অনুদান চালু করেছেন। অনেকেই তো অনুদানের বিরোধিতা করে আদালতে মামলা করেছিলেন। কিন্তু মামলা টেকেনি। বাংলার মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে জানেন। সেই হিসাবে বিধায়ক অমূলক কিছু বলেননি।” যদিও বিজেপির ভাতার ৩২ নম্বর মণ্ডল সভাপতি স্নেহময় কুণ্ডু বলেন, “দুর্গাপুজোর অনুদানের টাকা যেটা দেওয়া হচ্ছে সেটা সরকারি টাকা। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের করের টাকা। তাই তার জন্য কারও ছবি টাঙানোর কথা এভাবে বলা যায় না। যদি তাই হয় তাহলে তো অনুদান যখন চালু হল তখনই নিয়ম করে দিতে হত অনুদান নিলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবিও পুজোমণ্ডপে টাঙাতে হবে।”