ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ৪২ দিন পর জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারে আশার আলো দেখেছিলেন রাজ্যবাসী। তবে মাত্র ৭ দিনের মাথায় ফের অচলাবস্থা তৈরি হল সরকারি হাসপাতালগুলিতে। মঙ্গলবার সকাল ৭টায় ১০ দফা দাবিতে পুরোদমে কর্মবিরতিতে নামলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসকদের এহেন সিদ্ধান্তে কার্যত অচল হয়ে গেল রাজ্যের ২৮টি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। ফলস্বরূপ, চিকিৎসা করাতে এসে চরম ভোগান্তির শিকার হলেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা।
রাজ্য সরকারের অনুরোধ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কোনও কিছুকেই গ্রাহ্য না করে জুনিয়র ডাক্তারদের স্পষ্ট বক্তব্য, কর্মস্থলে চিকিৎসকদের কোনও নিরাপত্তা নেই। যার জেরে সাগরদত্ত, রামপুরহাট এমনকি গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতেও চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। যতদিন না নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে, ততদিন চলবে এই আন্দোলন। এদিকে কর্মবিরতির জেরে আজ সকাল থেকে বন্ধ ইন্ডোর ও আউটডোর। অর্থাৎ বাইরের রোগী দেখা হবে না। যারা ভর্তি সেই রোগীদের চিকিৎসাও অথৈ জলে। বন্ধ অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে এদিন সকাল থেকে শহরের হাসপাতালগুলিতে নজরে পড়েছে চূড়ান্ত ভোগান্তির ছবি। দূরদুরান্ত থেকে শহরে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসা রোগীদের ভিড় জমেছে। অথচ মিলছে না কোনও পরিষেবা। এই অবস্থায় মেডিক্যাল অফিসার ও সিনিয়র চিকিৎসকদের নিয়ে ডিউটি রোস্টার তৈরি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
জানা যাচ্ছে, অব্যবস্থার জেরে জরুরি অস্ত্রোপচার ছাড়া অন্য কোনও অস্ত্রোপচার চলছে না হাসপাতালগুলিতে। ট্রমা কেয়ার সেন্টার ও জরুরি বিভাগে কিছুটা পরিষেবা চালু রয়েছে। তবে তা নামমাত্র। এসএসকেএম হাসপাতালে এক রোগীর পরিজন বলেন, রোগীকে ভর্তি করবেন বলে গতকাল রাতে হাসপাতালে এসেছিলেন তারা। সারারাত হাসপাতাল চত্বরে কাটিয়ে সকালে টিকিট কাটতে গিয়ে জানতে পারেন জুনিয়র ডাক্তাররা ফের কর্মবিরতিতে নেমেছেন। এই অবস্থায় পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। একই ছবি দেখা গিয়েছে রাজ্যের বাকি হাসপাতালগুলিতেও। এই অবস্থায় নতুন করে কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
উল্লেখ্য, গত শনিবারের জিবি বৈঠক থেকে প্রয়োজনে ফের কর্মবিরতির পথে হাঁটার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সোমবার সুপ্রিম শুনানির পর ফের জিবি বৈঠক করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আট ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠক শেষে পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের কথায়, রাজ্যের তরফে নিরাপত্তার আশ্বাস মিলেছে ঠিকই। কিন্তু নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেনি সরকার। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ঘটনাকে তুলে ধরে ফের পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দেনন তাঁরা। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে দশ দফা দাবি জানানো হয়েছে। সেগুলো হল-
১. নির্যাতিতার দ্রুত ন্যায়বিচার
২. স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ
৩. হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা
৪. সমস্ত সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থা চালু করা
৫. হাসপাতালের খালি বেডের মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা
৬. ছাত্র সংসদ নির্বাচন
৭. হাসপাতালগুলির শূন্যপদ পূরণ করা
৮. হুমকি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা
৯. দ্রুত সমস্ত হাসপাতালে টাস্ক ফোর্স গঠন করে সিসিটিভি বসানো
১০. প্যানিক বোতামের ব্যবস্থা করা