নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: লক্ষ্য ছিল তন্ত্র সাধনায় সিদ্ধিলাভ। তাই প্রয়োজন নরবলির। সেইজন্য তান্ত্রিক দম্পতির হাতে সাড়ে চার বছরের শিশু কন্যাকে তুলে দিয়েছিল তারই দিদিমা। শিশুটিকে খুন করে হাত-পা-মুখ বেঁধে সেপ্টিক ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ২০১৮ সালের খানাকুল থানার হাড়হিম করা এই ঘটনায় খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্তকে ফাঁসির সাজা শোনালো আদালত। বিচার চলাকালীনই অভিযুক্ত তান্ত্রিক মারা যায়। এই ঘটনায় জড়িত তান্ত্রিকের স্ত্রীকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু কন্যার দিদিমাকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে আদালত। আজ, মঙ্গলবার আরামবাগের পকসো ও অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন আদালতের বিচারক কিসেন কুমার আগরওয়াল এই রায় শুনিয়েছেন।
মামলার সরকারি আইনজীবী ছিলেন, শেখ আমির হোসেন। তাঁর সহযোগী ছিলেন আরও দুই সরকারি আইনজীবী বিকাশ রায় এবং অনুপ কুমার দে। তাঁরা বলেন, তন্ত্র সাধনায় সিদ্ধিলাভের আশায় একরত্তিকে নৃশংসভাবে খুন করে দোষীরা। খুনের আগে তান্ত্রিক মুরারি পন্ডিত শিশু কন্যার উপর যৌন নির্যাতনও চালায়। যদিও মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীনই অভিযুক্ত বর্ধমান সংশোধনাগারে মারা যায়। তাই খুন, অপহরণ ও প্রমান লোপাটের দায়ে তান্ত্রিকের স্ত্রী সাগরিকা পন্ডিতকে ফাঁসির সাজা দিয়েছেন মহামান্য বিচারক। শিশুর বাবা, মা বাড়িতে না থাকার সুযোগে তার দিদিমা অপহরণ করে তান্ত্রিকের হাতে শিশু কন্যাটিকে তুলে দেয়। তাই তাকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুই আসামীকে অন্যান্য ধারা অনুযায়ী ১৫ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। জরিমানার সেই টাকা আদায় হলে শিশুর পরিবার তা পাবে। তার সঙ্গে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারকে পরিবারের হাতে তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যায় ওই শিশু কন্যা। খুঁজে না পেয়ে শিশুটির বাবা খানাকুল থানায় পরের দিন অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামেই এক ব্যক্তির নির্মীয়মান সেপ্টিক ট্যাঙ্ক থেকে তার পচা গলা দেহ উদ্ধার করে পুলিস। খানাকুল থানার পুলিস ঘটনার তদন্তে নেমে তান্ত্রিক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে। পরে শিশু কন্যার দিদিমাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তার দিদিমাও তন্ত্র সাধনার কাজে যুক্ত ছিল। সিদ্ধিলাভের পরামর্শে সে তার নাতনিকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে। পুলিসের জেরায় তারা ঘটনার কথা স্বীকার করে নেয়। সেইমতো মামলার চার্জশিট জমা দেয় পুলিস। এছাড়া তান্ত্রিকের গোয়াল ঘর থেকে রক্ত মাখা মাটি, ধূপ-ধুনো, সিঁদুর লাগানো বেল পাতা, শুকনো সাদা ফুল, সেন্টের খালি বোতল প্রভৃতি সামগ্রীও বাজেয়াপ্ত করে পুলিস। এছাড়া শিশুটির জুতোও উদ্ধার হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে অবশ্য অভিযুক্তরা জেল হেফাজতেই ছিল। তবে মূল অভিযুক্ত তান্ত্রিক মুরারির মৃত্যু হয়। বাকি দুই অভিযুক্তের অপরাধের বিচার করে এদিন তাদের দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। সাজা ঘোষণাও করা হয়।
সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, শিশু কন্যার দেহের ময়নাতদন্ত হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। সেখানে খুনের পাশাপাশি যৌন নির্যাতনের প্রমানও পাওয়া যায়। এছাড়া ডাক্তার, তদন্তকারী অফিসার-সহ মোট ১৯ জন সাক্ষী দেন এই মামলায়। এরপর সব দিক বিচার করে আদালত আজ এই রায় দিয়েছে।