হাবিব তানভীর, রামপুরহাট: তারাপীঠের খরুন গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাঁড়া রাজ্য ছাড়িয়ে পাড়ি দেয় বিদেশেও। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ, চারিদিকে উৎসবের মরশুম, সামনেই দুর্গাপুজো হাতেমাত্র কয়েকটা দিন। যদিও সারা বছর অন্যান্য অস্ত্র তৈরি হলেও উৎসবের মরশুমে কর্মীদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে।
দুর্গাপুজো, কালীপুজো, মনসা পুজো, এমনকী ধর্মরাজের পুজোতেও বলিদান প্রথা চালু আছে, কোথাও কোথাও পশু বলি তো কোথাও ফসল বলি দেওয়া হয়। অন্যদিকে তারাপীঠ দেশ-বিদেশের বহু তন্ত্রসাধক ও পর্যটক আসেন এবং খরুনে খাঁড়ার বরাত দিয়ে যান। বাংলা, অসম, ওড়িশা, বিহার, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং বাংলাদেশে পাড়ি দেয় খরুন গ্রামের খাড়া। এবছর দুর্গাপুজোর আগেই কলকাতা ও বাইরে রাজ্য থেকেই ২০টি খাঁড়া সরবরাহ করার কথা আছে। তাই দুর্গাপুজোর আগেই ভিড় জমে কর্মকার বাড়িতে। যদিও কর্মকার পরিবারের দাবি, দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজোর মধ্যে তাদের তৈরি বলিদানের খাঁড়া বেশি বিক্রি হয়। রাজ্য ছাড়িয়ে বিদেশেও পাড়ি দেয়।
গত ৪০ বছর ধরে খাঁড়া তৈরি করছেন তামালকৃষ্ণ কর্মকার। খাঁড়া প্রস্তুতকারক তামালবাবু জানান, “আমরা দুই ভাই তৈরি করি। দুজনে মিলে একটি খাঁড়া তৈরি করতে প্রায় ১৫ দিন সময় লেগে যায়। আমরা শুধু খাঁড়া তৈরি করি না, পেশাদার হিসাবে বলিদান করতেও আমন্ত্রণ পাই। একবার কলকাতায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমাকে।”
দিন দিন পশু বলি কমছে। তাতে কিন্তু খাঁড়া বিক্রি কমেনি। সাইজ অনুযায়ী খাঁড়ার দাম হয়। সবচেয়ে ছোট খাঁড়া ৩০ ইঞ্চির। ছোট খাঁড়াগুলি ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তামালকৃষ্ণবাবু আরও বলেন,”অনেকেই খাঁড়া তৈরি করেন। কিন্তু যেহেতু বংশপরম্পরায় বলিদানের খাঁড়া আমরা তৈরি করি, তাই সেই খাঁড়া সংগ্রহ করাও একটা ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে তান্ত্রিকদের কাছে।”