• আবাসের দুর্নীতি রুখতে গুচ্ছ নির্দেশিকা
    এই সময় | ০২ অক্টোবর ২০২৪
  • সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

    প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের তালিকায় ভুয়ো নাম থাকার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় দু’বছর ধরে বাংলার বরাদ্দ আটকে রেখেছে। রাজ্য নিজের বরাদ্দ থেকে গ্রামীণ এলাকায় গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সেখানে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি নিয়ে যাতে প্রশ্ন না-ওঠে, সে জন্য প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করল।ন্যূনতম তিনটি স্তরে তালিকা যাচাই করতে নবান্ন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) হিসেবে একগুচ্ছ নির্দেশিকা পাঠাল জেলা প্রশাসনকে। এই কাজে পঞ্চায়েতের কোনও জনপ্রতিনিধিকে রাখা হচ্ছে না। তালিকা যাচাইয়ের কাজে স্থানীয় থানার ওসি বা আইসিদের নজরদারির কথা বলা হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ভুল তালিকা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করতে হবে। তারপর ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য এই প্রকল্পের প্রথম দফার অর্থ বরাদ্দ করবে।

    আবাস যোজনার তালিকা নির্ভুল রাখতে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে আধিকারিক পর্যায়ের দল গঠন করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করবে। এই দলে ব্লক স্তরের আধিকারিক ছাড়াও সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের এগজ়িকিউটিভ অফিসার, সচিব বা সহায়ক পদমর্যাদার আধিকারিকদের রাখতে বলা হয়েছে।

    তাঁদের কাজ নজরদারিতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট স্তরের অফিসারকে নিয়োগ করা হবে, যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরপেক্ষ ভাবে তালিকা তৈরি করা যায়। নিচুতলার কোনও রাজনৈতিক প্রভাব যাতে তালিকা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে না পড়ে, সে জন্য দলে থাকা আধিকারিকদের উপর বিশেষ শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যদি কোনও ভুল ধরা পড়ে, অর্থাৎ অযোগ্য ব্যক্তির নাম তালিকায় ঠাঁই পায়, তবে তা ধরে নেওয়া হবে সেটা ইচ্ছাকৃত ভুল। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন যাচাই দলে থাকা আধিকারিকরা।

    নবান্ন চায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাইয়ের পর্বটি ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখতে, যাতে আগামী দিনে কোনও অভিযোগ উঠলে বা আদালতে মামলা হলে সেই ভিডিয়ো প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা যায়। নবান্নের এসওপি-তে বলা হয়েছে, তালিকায় থাকা উপভোক্তারা বর্তমানে কোথায় বসবাস করছেন, তা জিও ট্যাগিং করতে হবে।

    এই তালিকা গ্রামসভায় অনুমোদন করার পর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে বিডিও ও এসডিও অফিসে টাঙিয়ে দিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ তা দেখতে পান। জেলার ওয়েবসাইটেও রাখতে হবে। এই তালিকা প্রকাশের পরেও তিনটি স্তরে ফের তথ্য যাচাই করার কথা বলা হয়েছে সরকারি নির্দেশিকায়।

    নবান্নের কর্তাদের কথায়, তালিকা নির্ভুল রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। তালিকা থেকে ইচ্ছেমতো বিডিওরা যাচাই তালিকার ১৫ শতাংশ নাম, মহকুমা শাসকরা ৫ শতাংশ ও জেলাশাসকরা ২ শতাংশ নাম নিয়ে সরেজমিনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখবেন ওই তথ্য সঠিক কি না। এমনকী রাজ্যস্তরের আধিকারিকরাও ইচ্ছা করলে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে তালিকায় থাকা নামের সত্যতা র‍্যান্ডমলি যাচাই করতে পারেন। উপভোক্তাদের তালিকা নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তা সরাসরি জানানো যাবে।

    এ জন্য প্রত্যেকটি বিডিও অফিসে অভিযোগপত্র জানানোর জন্য বাক্স রাখা হবে। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই পাঁচটি কাজের দিনের মধ্যে তা যাচাই করে সঠিক ভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট থানার আইসি বা ওসিরা স্বাধীন ভাবে জেলা প্রশাসনের পরামর্শমতো তালিকায় থাকা নামের নমুনা পরীক্ষা করে দেখতে পারবে।
  • Link to this news (এই সময়)