• আরজি কর নিয়ে কেন চুপ মোদী-শাহ, ধন্দে বঙ্গ-বিজেপি
    এই সময় | ০২ অক্টোবর ২০২৪
  • মণিপুষ্পক সেনগুপ্ত

    আরজি কর ইস্যু নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাব ঠিক ভাবে ঠাহর করতে পারছেন না রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব! কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো পার্টির শীর্ষ নেতারা আরজি কর ইস্যুতে গত দেড় মাসে টুঁ শব্দটি করলেন না, তা চিন্তায় ফেলেছে রাজ্য বিজেপির একাংশকে। তাদের যুক্তি, এক বছর আগেও বাংলায় ছোটোখাটো কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে মোদী-শাহরা ‘রিঅ্যাক্ট’ করতেন, হঠাৎ কী এমন হলো যে, আরজি কর হাসপাতালে এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও নড়েচড়ে বসলেন না তাঁরা!

    আরজি কর হাসপাতালের এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় উত্তাল বঙ্গ-রাজনীতি। প্রতিবাদে পথে নেমেছে নাগরিক সমাজও। রোজই রাজ্যের কোথাও না কোথাও এই ইস্যুতে মিছিল-মিটিং চলছে। বঙ্গ-বিজেপি নেতৃত্বও নিজেদের মতো করে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু তা সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের বড় অংশের।ঠিক এখানেই প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে। অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে কোনও ইস্যু পেলেই দিল্লিতে নড়েচড়ে বসেছেন মোদী-শাহ-জগৎপ্রকাশ নাড্ডারা। বাংলার বিজেপি নেতাদের মনোবল বাড়াতে তাঁরা ছুটেও এসেছেন রাজ্যে। কিন্তু আরজি করের ক্ষেত্রে সেই শাহ-নাড্ডারা আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব। বিষয়টি যথেষ্ট ‘ইঙ্গিতবাহী’ বলে অভিমত রাজ্য বিজেপির প্রবীণ নেতাদের।

    দক্ষিণবঙ্গের এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গে একটা পেটো ফাটলেও দিল্লিতে গেল গেল রব তুলতেন অমিত শাহরা। গত পাঁচ বছরে দলের কতগুলি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম রাজ্যে এসেছে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। অথচ আরজি কর নিয়ে ওঁরা এখন পর্যন্ত একটা শব্দও খরচ করেননি।’ একই অভিমত রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর। তাঁর কথায়, ‘আমাদের দলের শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেতারা নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে রোজ অন্তত দশটা করে পোস্ট করেন। সেখানে একটা পোস্টও কি আরজি কর নিয়ে হতে পারতেন না!’

    দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর ‘নীরবতা’ সংক্রান্ত বিড়ম্বনা এড়াতে রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যর ব্যাখ্যা, ‘রাজ্য বিজেপি নেতাদের উপরেই আস্থা রেখেছেন অমিত শাহরা। কারণ, আমাদের যোগ্যতা সম্পর্কে তাঁদের কোনও সংশয় নেই। তাঁরা জানেন, আমরা আরজি কর ইস্যুতে পথে আছি।’

    কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, তা হলে আগে কেন কথায় কথায় রাজ্যে ছুটে আসতেন কেন্দ্রীয় নেতারা? তখন বাংলার বিজেপি নেতাদের যোগ্যতা সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন না? শমীকের জবাব, ‘বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিশ্বাস করে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে নাক গলাতে তাঁরাও চান না। বাংলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা তাঁদের অজানা নয়। কিন্তু তাঁরা তো আর দিল্লি থেকে এসে আন্দোলন করবেন না। সেটা আমরাই করছি।’

    যদিও আরজি কর ইস্যুতে মোদী-শাহদের নীরবতার একটা যুতসই কারণ অবশ্য খুঁজে বের করেছেন রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির। দলের অন্দরে তাদের যুক্তি, অশান্ত মণিপুর নিয়ে বহু মাস মৌনব্রতই অবলম্বন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ধর্ষণের ঘটনা নিয়েও তাঁকে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি। এখন আরজি কর নিয়ে সরব হয়ে উঠলে জাতীয় রাজনীতিতে শোরগোল পড়তে পারে। সেটা এড়াতেই মোদী-শাহরা মুখে কুলুপ এঁটে আছেন বলে মনে করছেন বঙ্গ-বিজেপির অনেকে।

    গেরুয়া শিবিরের আশা ছিল, কলকাতায় পুজো উদ্বোধন করতে এসে অন্তত আরজি কর নিয়ে মুখ খুলবেন অমিত শাহ। কিন্তু মঙ্গলবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ বার পুজোয় অমিত শাহের কলকাতায় আসার সম্ভাবনা কম। অষ্টমীর দিন অঞ্জলি দেওয়ার জন্য নাড্ডা এলেও আসতে পারেন।

    সোমবার রাতে দিল্লিতে নাড্ডার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে কি আরজি আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে? সুকান্তর জবাব, ‘পার্টির ভিতরের কথা বাইরে বলব না।’
  • Link to this news (এই সময়)