• হারিয়ে যাচ্ছে এলামাটির আঁকা, কান্দির পাড়ার দেওয়ালে এখন রেডিমেড আল্পনা
    বর্তমান | ০২ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কান্দি: বিলুপ্তির পথে দেওয়ালে এলামাটি লেপে আল্পনা আঁকার শিল্পকলা। পুজোর আগে আর প্রাকৃতিক রঙে সেজে ওঠে না মাটির ঘরের চারপাশ। এখন শুধু বাজারের রেডিমেড আল্পনা কিনেই ঘর সাজাচ্ছেন বাড়ির মহিলারা। কান্দি মহকুমাজুড়ে একই ছবি। শিল্প হারিয়ে যাওয়ায় আক্ষেপ প্রবীণদের।


    মহকুমার প্রবীণ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, একদশক আগেও মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে অসংখ্য মাটির বাড়ি ছিল। দুর্গাপুজোর আগে ওই বাড়িগুলিতে এলামাটি লেপে সৌন্দর্য্য বাড়ান হতো। বাড়ির দেওয়ালে চার থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত এলাকা মাটি লেপা হতো। ধানের গোলাও  একইভাবে সাজানো হতো। তার উপর খড়ি মাটি দিয়ে আল্পনা আঁকা হতো। যেখানে খড়ি মাটি পাওয়া যেত না সেখানে আতপ চাল গুঁড়ো করে খড়ির কাজ করা হত। আবার অনেকে আভিজাত্যের প্রমাণ দিতেও আতপ চালের গুঁড়ো ব্যবহার করত।


    শুধু আল্পনা আঁকা বলে নয়। বড়ঞা ব্লকের আন্দি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জীতেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, দরজার পাশে বাড়ির মহিলারা সুন্দর সুন্দর ছবিও আঁকতেন ঘরের সৌন্দর্য্য বাড়াতে। সম্পূর্ণ ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি করা হত রং।


    তিনি বলেন, ভেষজ রং তৈরিতে ব্যবহার করা হত তেঁতুলের বীজ, শিউলি ফুল, গাবের আঁঠা। খড় পুড়িয়ে কালো রঙও তৈরি করা হতো। সবুজ রংয়ের জন্য গাছের পাতা ব্যবহার করা হত। পরবর্তীতে বাজারে কেনা রঙেও ছবি আঁকা হতো। কিন্তু এখন ওই শিল্পকলা হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই চরম আক্ষেপ লাগে।


    যদিও এখনও কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত গ্রামে ওই শিল্পকলা চালু রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। খড়গ্রাম থানার ছত্রপুর একটি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। ওই গ্রামের গৃহবধূ রুমিলা টুডু বলেন, আর এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা আল্পনা আঁকার কাজ শুরু করব। বাজার থেকে রং ও মাটি কিনে আনা হয়েছে। একইভাবে এলাকার নগরগ্রাম, শিবপুর, কান্দি ব্লকের মহালন্দি, বড়ঞা ব্লকের শ্রীহট্ট গ্রামেও অল্প সংখ্যায় বাড়িতে আল্পনা ও ছবি আঁকার প্রচলন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কান্দি রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক তাপস কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওই শিল্পকলা বিলুপ্তির জন্য দায়ী জীবনে আধুনিকতার প্রবেশ। এখন মানুষ রেডিমেড বাজারমুখি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও অধ্যাপকের ওই দাবিকে স্বীকার করে নিয়েছেন। ঘরোয়া পদ্ধতির শিল্পকলার বাজার দখল করেছে রেডিমেড আল্পনা। বাসিন্দারা অল্প খরচে বাজার থেকে রেডিমেড আল্পনা ও ছবি কিনে এনে ঘর সাজাচ্ছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)