• সংসার সামলে প্রতিমার শোলার সাজ প্রস্তুত করেন বনকাপাশির মহিলারা
    বর্তমান | ০২ অক্টোবর ২০২৪
  • অনিমেষ মণ্ডল, কাটোয়া: মোরগ ডাকার শব্দ শুনেই ঘুম থেকে উঠে মাটির বাড়ির দরজায় জল দেন তাঁরা। তারপর সংসারের সব ঝক্কি সামলে পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিমার জন্য শোলার সাজসজ্জা তৈরিতে বসে পড়েন মঙ্গলকোটের বনকাপাশির মহিলারা। প্রতিমার হাতের বালা, আঁচল, মুকুট, কানের দুল-শোলার উপর নানা নকশা ফুটিয়ে তুলে তাঁরা এই সবই তৈরি করেন।


    মঙ্গলকোটের বনকাপাশির মহিলাদের হাতে তৈরি শোলার সাজে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্গাপ্রতিমা সেজে উঠবে। শুধু এরাজ্যই নয়, বনকাপাশির মহিলাদের তৈরি শোলার সাজ অসম, উত্তরপ্রদেশ, এমনকী, কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালুরুতেও পাঠানো হবে।


    কয়েক দশক ধরে মঙ্গলকোটের বনকাপাশির শোলাশিল্পের সুনাম রয়েছে। প্রতিমার গয়না, আঁচল, শাড়ি, জরি-চুমকি বসানো শোলার নানা সাজ তৈরিতে এখানকার শিল্পীদের জুড়ি মেলা ভার। ১৯৯০ সাল থেকে শোলাশিল্পের জন্য গ্রামে প্রচুর পুরস্কার এনেছেন শিল্পীরা। সেবছর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামেশ্বর ভেঙ্কটরমনের হাত থেকে পুরস্কার পেয়েছিল গ্রামেরই স্বনামধন্য শোলাশিল্পী আশিষ মালাকারের পরিবার। আশিসবাবু নিজেও রাষ্ট্রপতি পুরস্কার ও  শিল্পগুরু পুরস্কার পেয়েছেন।


    বনকাপাশি গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের বাস। তাঁদের বেশিরভাগই শোলাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভিনরাজ্যে যাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের তৈরি শোলার শিল্পকর্ম বিদেশেও পাড়ি দেয়। দিল্লি, মুম্বই সহ নানা শহরে বড় বড় মণ্ডপে বনকাপাশির শোলা দিয়েই কারুকার্য হয়। বাইরে এগ্রামের পুরুষ শিল্পীদের পরিচিতিই বেশি। তবে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের মহিলারাও যে শোলায় নানা নকশা তুলে, জরি-চুমকি বসিয়ে সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করেন-সেটা এখনও অনেকের অজানা।


    বনকাপাশির শোলাশিল্পী পূর্ণিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরমশাই, স্বামীর কাজ দেখছি। তাই রান্না করে, সংসারের অন্য কাজ সামলে আমরাও শোলার সাজ তৈরিতে বসে পড়ি। আমাদের হাতে তৈরি শোলার সাজ যখন দেবীপ্রতিমার গায়ে পরানো হয়-তখন আনন্দের সীমা থাকে না। অপর শোলাশিল্পী স্বপ্না ঘোষ বলেন, আমাদের হাতে তৈরি শোলার সাজ এবার ব্যাঙ্গালুরু, অসম যাচ্ছে। সংসার সামলে আমরাও পুরুষদের সমান কাজ করতে পারি।


    স্থানীয় শোলাশিল্পী প্রসাদ ঘোষ বলেন, আগে এই কাজে বহু শ্রমিক পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সবাই নিজে কাজ ধরে। তাই শোলাশিল্প পরিবারভিত্তিক হয়ে গিয়েছে। বাড়ির মেয়েরা সাহায্য না করলে আমাদের একার দ্বারা একাজ হবে না।


    ঘরের মেয়ে উমা আসছেন আর কিছুদিনের মধ্যেই। তাই বনকাপাশির নানা বাড়ির ‘উমা’দের এখন সময় নেই। রাতদিন তাঁরা শোলার উপর নানা নকশা ফুটিয়ে দেবীর সাজসজ্জা তৈরি করছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)