শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি খোয়াই হাটে ব্যাপক কেনাকাটা পর্যটকদের
বর্তমান | ০২ অক্টোবর ২০২৪
ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: সারা বছর টুকটাক কেনাকাটা চললেও বাঙালির জামাকাপড় কেনার সেরা সময় দুর্গাপুজো। তাই বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব আসতেই রাজ্যের সর্বত্রই কেনাকাটার ধুম পড়েছে। বস্ত্রশিল্পী ও ব্যবসায়ীদের এই সময়ে পোয়াবারো। তবে শুধু স্থানীয় দোকানেই নয়, বিশেষত্বের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতেও এবছর ব্যাপক ভিড় নজরে পড়েছে। শান্তিনিকেতন মূলত বিখ্যাত হস্তশিল্পের কারণে। এখানকার বাটিক, কাঁথাস্টিচ, বুটিক, বাঁধুনি, এমব্রয়ডারি, হ্যান্ডলুম প্রভৃতি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই ঘুরতে আসার পাশাপাশি, পুজোর শপিংও সেরে ফেলছেন দর্শনার্থীরা। একরকম রথ দেখা কলা বেচা। আর তাতেই শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে।
রাজ্যে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে শান্তিনিকেতন অন্যতম। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত বিশ্বভারতীর পাশাপাশি সোনাঝুরি খোয়াইয়ের হাটের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্য ও দেশের নানা প্রান্তে। তাই গ্রীষ্ম বা বর্ষা, শীত কিংবা বসন্ত, প্রায় সারা বছরই শান্তিনিকেতনে ভিড় উপচে পড়ে। তবে এবছর কেনাকাটার জন্য শরৎকালে শান্তিনিকেতনকেও অনেক দর্শনার্থী বেছে নিয়েছেন। তাই অন্যান্যবারের তুলনায় এবছর একটু বেশি ভিড় হচ্ছে খোয়াই হাটে। বিশেষত, সপ্তাহে চারদিন হাট বসার কারণে পর্যটকদের একটু বেশি সুবিধা হয়েছে। ইচ্ছেমতো শপিং করার সুযোগ মিলছে। তাই পুজোর আগে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সহজ পাঠে নন্দলাল বসুর আঁকা ছবি কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন কবিতার লাইন এই ধরনের শাড়ি ও পাঞ্জাবি কেনার চাহিদা রয়েছে এবার। কলকাতার উত্তরপাড়া থেকে আসা স্বর্ণালী ও বাপ্পাদিত্য সরকার বলেন, অনেকদিন ধরেই শান্তিনিকেতনের পোশাকের নাম শুনেছি। তাই এবছর ঘুরতে এসে জমিয়ে কেনাকাটা করলাম। সবচেয়ে ভালো লেগেছে পোশাকের মান উচ্চমানের হলেও দাম যথেষ্টই নাগালের মধ্যে। যা আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের কাছে বাজেট ফ্রেন্ডলি। তাই নিজেদের জন্য কেনাকাটার পাশাপাশি পরিবারের বাকি সদস্যদের জন্য জামাকাপড় কিনেছি। শুধু কলকাতা বা দক্ষিণবঙ্গ থেকেই নয়, উত্তরবঙ্গ থেকেও অনেকেই এই রবিবার ভিড় জমিয়েছিলেন খোয়াইয়ের হাটে। পর্যটক দেবতনু মণ্ডল ও রূপসা সেনগুপ্ত বলেন, বিশ্বভারতীর টানে প্রথমবার শান্তিনিকেতন ঘুরতে এলাম। সকালে শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবন, সতীপীঠ কঙ্কালীতলা ঘুরে দেখার পর বিকেলে খোয়াই হাট ঘুরতে এসেছি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরলেও এই অনন্য পরিবেশ এর আগে কোথাও দেখিনি। পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি চুটিয়ে কেনাকাটা করলাম। এখানকার পোশাক সামগ্রী ও হস্তশিল্পের গুণমান যথেষ্টই নজরকাড়া। তাই বাটিকের পাঞ্জাবি, কাঁথাস্টিচ, এমব্রয়ডারির বেশকিছু শাড়ি কিনেছি। হোয়াটসঅ্যাপে স্থানীয় বন্ধুদের সেই পোশাক দেখাতে তারাও কেনার জন্য আবদার করেছে। তাই তাদের জন্যও কিছু জামাকাপড় কিনছি। এর পরের বার শুধুমাত্র কেনাকাটার জন্যই শান্তিনিকেতন করতে আসব।
পুজোর আগে ভালো বেচাকেনা হওয়ায় হাটের শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যেও বেশ খুশি খুশি ভাব। হাটের পোশাক বিক্রেতা তুলিকা ঘোষ, সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, সপ্তাহে চারদিন হাট বসার কারণে পর্যটকদের ভিড় এবার বেশ ভালোই দেখা গিয়েছে। তবে হস্তশিল্প সামগ্রী থেকে পোশাক কেনাকাটাতেই দর্শনার্থীরা বেশি ঝুঁকেছেন। তাই এবছর ব্যবসা ভালোই হয়েছে।