‘থ্রেট কালচারে’র নামে অপছন্দের ইন্টার্নদের টার্গেট! আতঙ্কে পিজিটিরাও, স্বাস্থ্যভবনে অভিযোগ
প্রতিদিন | ০২ অক্টোবর ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘থ্রেট কালচার’-এর নামে নিজেদের অপছন্দের ইন্টার্ন-পিজিটিদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দিতে তৎপর আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। এঁদের মধ্যে আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত ‘রাগ-অপছন্দ’ মেটাতে তথাকথিত থ্রেট কালচারের অভিযোগ এনে সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামোর বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ এনে হাসপাতালে নিজেদের ‘দখলদারি-রাজ’ চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে দাবি।
যাঁরা আর জি কর ইস্যু নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধরনায় যাননি, অনিকেত-দেবাশিসদের হাতের পুতুল হয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষোদ্গার করেননি মূলত তাঁদেরই বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে আতঙ্কিত পিজিটি-ইন্টার্নদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন। বস্তুত এর পরেই মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ‘থ্রেট কালচার’-এর নাম করে এভাবে পিজিটি-ইন্টার্নদের বেছে বেছে হাসপাতাল-হস্টেল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয় নিয়ে রাজ্যের মেডিক্যাল শিক্ষা অধিকর্তাকে বিশেষ নজরদারি চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন। চন্দ্রিমার কথায়, “তথাকথিত ‘থ্রেট কালচার’-এর নামে যে সমস্ত জুনিয়রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে সেগুলি যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখুন। অভিযোগকারীর ব্যক্তিগত অপছন্দ বা রাগ মেটাতে করা মিথ্যা অভিযোগের জেরে যেন কেউ শাস্তি না পায়। গ্রাম থেকে, জেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করে এমবিবিএস সম্পূর্ণ করে ইন্টার্ন-পিজিটি হয়েছে। এখন হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে। আচমকা একটা অভিযোগ পেয়ে হস্টেল থেকে বের করে দিলে তারা যাবে কোথায়? যদি সত্যিকারের কোনও অভিযোগ থাকে নিশ্চয়ই তদন্ত করে পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু অকারণে মিথ্যা অভিযোগে যাতে শাস্তি না হয় তা দেখতে হবে মেডিক্যাল কলেজগুলির প্রিন্সিপ্যাল ও সুপারদের।”
আর জি কর হাসপাতালের নির্যাতিতার ঘটনা নিয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির অন্যতম একটি ছিল ‘থ্রেট কালচার’। বস্তুত সেই দাবির জেরে রাজ্য সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। আর এর পরই ওই কমিটিতে বেছে বেছে কিছু পিজিটি ও ইন্টার্নের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’-এর অভিযোগ জমা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট এসেছে, ওই অভিযোগগুলির অধিকাংশই ভুয়ো এবং তথাকথিত আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের মস্তিষ্কপ্রসূত। কারণ, যাঁদের ওই জুনিয়র ডাক্তাররা পছন্দ করেন না অথবা ব্যক্তিগত কোনও রাগ-ঝাল মেটাতে মিথ্যা অভিযোগ জমা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, “গোটা বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তথাকথিত ‘থ্রেট কালচার’-এর নামে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে কুৎসিত-ঘৃণ্য চক্রান্ত শুরু হয়েছে। যাঁদের অপছন্দ করেন, গত দেড় মাসে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেনি, বেছে বেছে সেই সমস্ত পিজিটি-ইন্টার্নদের টার্গেট করা হচ্ছে। জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ হাসপাতালে নিজেদের ‘রাজত্ব’ কায়েম করতে ওই ডাক্তারদের হস্টেল থেকে বের করে দিতে চাইছে।” এর পরই অবশ্য কুণাল বলেন, “যদি সত্যিই কেউ কোনও অপরাধ করে থাকেন তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু যাঁরা দীর্ঘ পরিশ্রম করে গ্রাম থেকে শহরে এসে বা অন্য জেলায় এসে পড়শোনা করে জুনিয়র ডাক্তার হয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ‘থ্রেট কালচার’-এর অভিযোগ করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া অতীব অন্যায়। আশা করি, রাজ্য সরকার ও চিকিৎসা-প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন।” এর পরেই এক প্রশ্নের উত্তরে কুণাল বলেন, “সবাই জয়েন্ট এন্ট্রান্স-নিট পরীক্ষা দিয়ে এমবিবিএসে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করে জুনিয়র ডাক্তার হয়েছেন। কিন্তু কারও ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দের জেরে ‘থ্রেট কালচার’-এর নামে অন্য একজন জুনিয়র ডাক্তারকে কেন অকারণে শাস্তি পেতে হবে? দেখতে হবে কেউ যেন কারও মিথ্যা অভিযোগে চিকিৎসা জগতে শাস্তি না পান। প্রকৃত দোষীরা অবশ্যই শাস্তি পাক। এটা সাধারণ মানুষও চায়।”