‘বাইরে চল, তোকে দেখে নেব’, মহিলা ডাক্তারকে প্রকাশ্যে হুমকি
এই সময় | ০২ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়, বর্ধমান: ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ বার হাসপাতালের ভিতরেই এক রোগীর আত্মীয়ের হুমকির মুখে পড়তে হলো এক মহিলা পিজিটি-কে (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি)। অভিযোগ, এক রোগীর মৃত্যু ঘিরে অশান্তি তৈরি করার চেষ্টা করে তপন মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তি। ‘দেখে নেব’ বলে হুমকিও দেওয়া হয় ওই মহিলা ডাক্তারকে।বিষয়টি জানাজানি হতেই সোমবার রাতে হাসপাতালে বিক্ষোভ শুরু করেন চিকিৎসকরা। রাতেই হাসপাতালে আসেন সুপার তাপস ঘোষ ও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানান সুপার। এর পরই অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়া মাত্র পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপোষ করা হবে না।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ভোরে বীরভূমের কির্নাহারের বাসিন্দা শফিকুল শেখ (২২) সাপের ছোবল খেয়ে ভর্তি হন বর্ধমান মেডিক্যালে। সোমবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নির্দিষ্ট সময় পর ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য শফিকুলের বাড়ির লোকেদের ডেকে পাঠান এক মহিলা জুনিয়র চিকিৎসক।
অভিযোগ, সেই সময়ে অন্য এক রোগীর আত্মীয় তপন ওই চিকিৎসককে বলেন, ‘আপনারা ভালো করে দেখলেন না বলেই ছেলেটি মারা গেল।’ কথাটি শোনা মাত্র তপন ও ওই চিকিৎসকের মধ্যে বচসা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে হাজির হন জনা পাঁচেক ব্যক্তি। সোহম গড়াই নামে এক জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের ওই মহিলা ইন্টার্ন যখন ওই ব্যক্তির কথার প্রতিবাদ করেন, তখন তিনি সবার সামনেই বলেন— বাইরে চল, তোকে দেখে নেব। এখন এই পরিস্থিতির মধ্যেও যদি এ ভাবে থ্রেট চলতে থাকে, তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের নিরাপত্তা যে নেই, সেটা পরিষ্কার।’
সোহমের আরও অভিযোগ, ‘একটি ওয়ার্ডে পেশেন্ট পার্টির বাড়ির লোক বলে ৭-৮ জন করে ঢুকে পড়ছে। নিরাপত্তাকর্মীদের সে বিষয়ে আমরা জানালে তাঁরা বলছেন— টানা ডিউটি করছি, এত দেখা সম্ভব নয়। ওঁরা যদি নিরাপত্তাই নিশ্চিত করতে না পারেন, তা হলে আমরা কাজ করব কী ভাবে। তাই শেষপর্যন্ত বিক্ষোভ করতে হয়েছে আমাদের।’ শুধু ডাক্তাররাই নয়, মঙ্গলবার সকালে নিরাপত্তারক্ষীদের আচরণের প্রতিবাদে পুলিশ ক্যাম্পের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন একাধিক রোগীর পরিবারের লোকজন।
হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘রাতে এক রোগীর মৃত্যু ঘিরে জরুরি বিভাগের মধ্যে একটি ঘটনা ঘটে। খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ নিয়ে আমরা সেখানে পৌঁছোই। প্রিন্সিপল ম্যাডামও ছিলেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনে আমরা থানায় অভিযোগ জানাই। যিনি হুমকি দিয়েছিলেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন সেই তপন মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে যে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে বচসা হয়েছিল তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি লিখিত ভাবে ক্ষমাও চেয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে।’