বর্ষণ-বন্যায় আকাল পদ্মের, সন্ধিপুজোর অর্ঘ্য তাই মহার্ঘ
এই সময় | ০২ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়: মায়ের আগমন যাতেই হোক আর তার ফল যা-ই হোক না কেন, সন্ধিপুজোয় ১০৮ পদ্ম মাস্ট। কিন্তু এ বার তা মিলবে কী করে? বানের জলের ডুবে পদ্ম চাষের দফারফা। কিছু ফুল বাঁচানো গেলেও তাতে কি প্রয়োজন আদৌ মিটবে? পদ্মের অভাব যে রয়েছে, সে কথা মানছেন চাষি থেকে বিক্রেতা, পুজো উদ্যোক্তারাও। অথচ চাহিদা কমেনি।কাজেই অর্থনীতির সরল তত্ত্বে দাম যে বাড়বে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তা হলে কী করণীয়? এই প্রশ্নে আসরে নামছেন শাস্ত্রজ্ঞরা। উদ্যোক্তাদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করছেন তাঁরা। জানাচ্ছেন, ১০৮ পদ্ম যদি একান্তই না মেলে, তা হলে ২৮-এ কাজ চলবে। তা-ও অমিল হলে আটটি পদ্মে করা যায় সন্ধিপুজো।
তবে শুধু পদ্ম নয়, সাম্প্রতিক বর্ষণ ও বন্যায় সামগ্রিক ভাবেই ফুল চাষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফুলের জোগান মূলত আসে দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া এবং দুই ২৪ পরগনা থেকে। জেলাগুলির অনেকাংশই বন্যায় প্রভাবিত। কাজেই ২৫ টাকা পিসের পদ্মের দাম ৫০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট-পাঁশকুড়া এলাকায় পদ্মের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। সাধারণত রেল লাইন এবং সড়কের পাশের নয়ানজুলিতে এই চাষ হয়ে থাকে। পুজোর দিন পনেরো আগে থেকে সাধারণত পদ্ম সংগ্রহ করে হিমঘরে সংরক্ষণ করেন চাষিরা। ‘সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’-র সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘পুজোতে গোটা রাজ্যে এক কোটি পদ্মের প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বাংলায় অত পদ্ম পাওয়া যাবে না। সে জন্য ওডিশা এবং অন্য রাজ্য থেকে পদ্ম আমদানি করতে হবে।’
তিনি জানান, ভিন রাজ্য থেকে আমদানি করা পদ্ম তেমন ভালো হয় না। আবার, তার দামও বেশি। সোমবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বাজারে এক একটি পদ্মের দাম ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। পুজোয় সেটাই ৫০-৬০ টাকা ছুঁতে পারে।
ক্ষীরাই, পাঁশকুড়া, ভোগপুর নন্দাইগাজন-সহ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হাওড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার জলে ডুবে নষ্ট হয়েছে প্রচুর পদ্ম। গাছ এখনও ডুবে থাকায় নতুন করে ফুল ফুটছেও না। দুই জেলার বাজারে এখনই একটি পদ্মের দাম ২০-২৫ টাকা। পুজোর সময়ে তা দ্বিগুণ বা তার বেশি হবে। ভোগপুরের পদ্মচাষি মুকুন্দ নায়েক বলেন, ‘এখন একমাত্র ভরসা ওডিশার সিঙ্গল (ছোট) পদ্ম।’
নদিয়ার কৃষ্ণনগর লাগোয়া ঠাকুরতলা স্নানের ঘাটের ফুল বিক্রেতা অরিজিৎ মোদক বলেন, ‘বীরভূমের আহমেদপুর থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে দু’হাজার পদ্ম কিনেছি। দাম পড়েছে ১৮ থেকে ২২ টাকা পিস। আপাতত ফউলগুলি হিমঘরে রেখেছি। হাওড়া-বীরভূম থেকে আরও তিন হাজার কিনব। বেঙ্গালুরু থেকে আসা পদ্মও কিনতে হবে। বাজার বুঝে দাম ঠিক হবে।’ নবদ্বীপের চর ব্রহ্মনগর মাঝেরপাড়ার পদ্মচাষি আনন্দ রায় বলেন, ‘গত বছর আমার জলাশয় থেকে দু’হাজার পদ্ম পেয়েছিলাম। এ বার সেখানে ৩০০টি পদ্ম পেয়েছি। পাইকারি দাম ৫০ টাকা হবে।’
দক্ষিণ কলকাতার সমাজ সেবী ক্লাবের পুজো-উদ্যোক্তা অরিজিৎ মৈত্র বলেন, ‘আমরা ক্লাবেরই একজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তিনি ১০৮টি পদ্ম জোগাড় করেছেন। তবে দাম বাড়বে। কত বাড়বে, তা ওই সময়ে জানতে পারব।’ টালা বারোয়ারির উদ্যোক্তা অভিষেক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘মঙ্গলাহাটের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আমরা পদ্ম নিই। তিনি জানিয়েছেন ফুল দেবেন, তবে দাম দ্বিগুণ হতে পারে।’
যদিও অনেক ছোট পুজোর উদ্যোক্তাই জানিয়েছেন, চড়া দাম দিয়ে ১০৮ পদ্ম তাঁরা কিনতে পারবেন না। চেষ্টা করেও কোথাও ১০৮টি পদ্ম পাওয়ার নিশ্চয়তাও মেলেনি। তা হলে কী করবেন? শাস্ত্রজ্ঞ কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘শাস্ত্রে সংস্থান রয়েছে। প্রদীপ যেমন ১০৮টির বদলে ২৮টি জ্বালানো যায়, তেমনই পদ্ম না মিললে ২৮টি বা আটটি দিয়েও সন্ধিপুজো হয়।’