এই সময়: নিউ টাউনের অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে কয়েকজন মিলে মারধর করে গৌরব দত্তকে (২০)। প্রকাশ্য রাস্তায় মারধরের ঘটনা মানতে পারেননি সল্টলেকের সেচ আবাসনের বাসিন্দা আইনের দ্বিতীয় বর্ষের ওই পড়ুয়া। সে কারণেই আত্মহত্যার পথে হেঁটেছেন গৌরব—সন্দেহ পরিবারের। একই সঙ্গে তাঁদের প্রশ্ন, ছেলে যদি কোনও অপরাধ করে থাকে তা হলে এ ভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর করাটা কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত?অপরাধ করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ অথবা তাঁদের কাছেও অভিযোগ জানানো যেত। তবে, এর আগে গৌরবের নামে পুলিশ বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি—এমনটাই দাবি পরিবারের। পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাতেও হতাশ মৃতের পরিবার।
২৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ রবিবার ছিল গৌরবের জন্মদিন। কী ভাবে জন্মদিন পালন হবে, তা নিয়ে নানা প্ল্যানিংও করে ফেলেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। এই আবহেই শুক্রবার বিকেল উদ্ধার হয় ওই যুবকের মৃতদেহ। জন্মদিনের দু’দিন আগে এমন ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই মানতে পারছে না কেউই। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই যুবকের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তাঁর সঙ্গে কারও সম্পর্ক ছিল কি না? সম্পর্ক ঘিরে কোনও গোলমাল বেধেছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক কী ঘটেছিল? তা জানতে গৌরবের বেশ কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথাও বলেছেন তদন্তকারীরা। তবে, তদন্তের বিষয়ে কিছু জানাতে নারাজ পুলিশ। সূত্রের দাবি, গৌরবের চার জন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। বেশ কিছু তথ্য তাঁদের থেকে মিলেছে। বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
পরিবারের প্রশ্ন, নিউ টাউনের সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরায় মোড়া। প্রকাশ্য রাস্তায় একজনকে মারা হলো অথচ কারও নজরে তা পড়লো না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কিছু দেখলেন না? ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরেই অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্যাম্পাসের মধ্যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাঁদের কাছে এই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগও আসেনি। রাগিং ঠেকাতে পর্যাপ্ত নজরদারি রয়েছে। সেখানেও কোনও অভিযোগ কেউ করেনি। সেই প্রসঙ্গ টেনে মৃতের পরিবারের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনওভাবেই ঘটনার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।
তাঁরা শুনতে পাচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। সিসিটিভি খতিয়ে দেখলেই তো সবটা সামনে আসবে? তবে, কী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাউকে আড়াল করতে চাইছে? প্রশ্ন পরিবারের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর আস্থা না থাকলেও পুলিশের উপর তাঁদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে মৃতের বাবা গৌতম দত্ত। ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট যাতে ঠিকভাবে হয় এমন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা যাতে সবদিক খতিয়ে দেখে নির্ভুল রিপোর্ট দেন, সেই আর্জি প্রশাসনের কাছে রেখেছে পরিবার। গৌতম বলেন, ‘শুনেছি, গৌরবকে কয়েকজন মারধর করেছিল। পুলিশের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আশা রাখি, প্রকৃত সত্য সামনে আসবে।’