ভাঙড়ে মজুমদার বাড়ির পুজোয় সম্প্রীতির নজির, অষ্টমীতে পঙ্ক্তিভোজনে বসেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ
প্রতিদিন | ০২ অক্টোবর ২০২৪
দেবব্রত মণ্ডল: পুরনো সেই জমিদারি নেই। প্রজাদের কাছ থেকে এখন আর খাজনাও আসে না। সেই প্রথা বিলোপ পেয়েছে কবেই। তবু স্থানীয় দুই সম্প্রদায়ের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণে আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল ভাঙড়ের মজুমদার বাড়ির দুর্গোৎসব।
প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই পুজোয় আগের মতো আড়ম্বর-জাঁকজমক আর দেখা যায় না। বন্ধ হয়ে গিয়েছে নাটমন্দিরে দুর্গাপ্রতিমা গড়ার কাজও। পুজোতে বন্ধ পশুবলি প্রথাও। তবু শারদোৎসবের কটা দিন এখানে হিন্দু ও মুসলমানের যে মেলবন্ধন ঘটে, তা শতাব্দীপ্রাচীন মজুমদার বাড়ির পুজোতে অন্য মাত্রা এনে দেয়। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা ভাঙড়। এখানে হিন্দুদের থেকে মুসলমানের বসবাস বেশি। কিন্তু তাতে কী?
ভাঙড়ের এই পুজোকে ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠেন দুই সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীই। হিন্দুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজোর বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেন মুসলিমরা। বিশেষ করে অষ্টমীর দিন সবাই মিলে একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়ার দৃশ্য তাঁদের পুরনো দিনের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় বলে জানালেন পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা। শহরের কাছেই ভাঙড়ের স্বস্ত্যয়নগাছি গ্রাম। আর সেখানেই রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন মজুমদার বাড়ি।
এক সময় আত্মীয়-স্বজন এবং লোকজনে গমগম করত মজুমদারদের এই বিশাল জমিদার বাড়ি। পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ মিলে তিন মহলার দ্বিতল বাড়ি ছিল মজুমদারদের। এখন অবশ্য তার ভগ্নদশা। একটি মহলার অস্তিত্বই বিলোপ হয়েছে। তবে দুটি মহলার দ্বিতল বাড়ি এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যদিও সংস্কারের অভাবে তা ভগ্নপ্রায়। তবু নিয়ম মেনে প্রতি বছরই ভাঙড়ের মজুমদার বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। এই বাড়ির লোকজন আর এখানে থাকেন না। কিন্তু গোবিন্দের নিত্যপুজো এবং দুর্গাপুজোর জন্য একজন পুরোহিত রাখা রয়েছে। একজন কেয়ারটেকারও রয়েছে। মজুমদার বাড়ির তরফে তাপস মজুমদার জানান, ‘‘এবারেও স্বস্ত্যয়নগাছি মজুমদার বাড়ির দুর্গাপ্রতিমা গড়ছেন শিখরপুরের মৃৎশিল্পী ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস।’’
জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোর পর শুরু হয়েছে মূর্তি গড়ার কাজ। আগের মতো এই পুজো জাঁকজমক না থাকলেও এখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণ মুগ্ধ করে। এটাই এই পুজোর বৈশিষ্ট্য। গ্রামের হিন্দুরা যেমন এই পুজোয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তেমনই মুসলিমরাও বিভিন্ন কাজে হাত লাগান। এমনকী, নাটমন্দিরের সংস্কারের কাজও করেছেন এক মুসলিম যুবক। সব মিলিয়ে এককথায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ মজুমদার বাড়ির দুর্গাপুজো।