পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে সৎবোনের গলার নলি কেটে খুন করেছিলেন দাদা। খুনে সঙ্গ দিয়েছিলেন বৌদি। ঝাড়গ্রামের বেলিয়াবেড়া থানার হত্যাকাণ্ডের তেরো মাসের মধ্যে দুই আসামিকে সাজা দিল জেলা আদালত। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম নগর দায়রা আদালত তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। ১৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হল হত্যা মামলার।
আদালত এবং পুলিশ সূত্রে খবর, বেলিয়াবেড়া থানার কানপুর গ্রামে থাকতেন অনিল নায়েক এবং তাঁর স্ত্রী পুতুল নায়েক। ওই একই গ্রামে তাঁদের বাড়ির কাছেই থাকতেন অনিলের সৎবোন। তাঁর নামও পুতুল। তরুণীর বিয়ে হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের মানুষমুড়িয়া গ্রামে। তবে বিয়ের পর থেকে পুতুল স্বামীকে নিয়ে কানপুর গ্রামে থাকতেন। গত বছরের ২৬ আগস্ট পুতুলের দিদি লক্ষ্মী নায়েক বোনের বাড়ি বেড়াতে আসেন। কিন্তু পর দিন, ২৭ অগস্ট সকালে উঠে বোনের নলিকাটা রক্তাক্ত দেহ বাড়ির অদূরে পড়ে থাকতে দেখেন লক্ষ্মী। অতীতে পারিবারিক অশান্তির অভিজ্ঞতা থেকে লক্ষ্মীর সন্দেহ হয় বোনের খুনি সৎদাদা এবং বৌদি। তাঁরই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই খুনের তদন্ত শুরু করে। অন্য দিকে, সৎবোনের খুনের পর থেকেই অনিল এবং তাঁর স্ত্রী পলাতক ছিলেন। কিছু দিন তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালানোর পর সাফল্য মেলে। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্ত সংলগ্ন একটি এলাকা থেকে অনিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দু’দিন পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তাঁর স্ত্রী পুতুল।
পুলিশি হেফাজতে অনিল এবং পুতুল স্বীকার করে নেন খুনের কথা। দম্পতি জানান, সম্পত্তির লোভেই সৎবোনকে খুন করেছেন তাঁরা। খুনের ঘটনার ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে আদালতে। চার্জ গঠন হয় গত ৯ জানুয়ারি। দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণও শুরু হয়ে গিয়েছিল। মোট ১০ জনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সোমবার অভিযুক্ত দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। তার পর মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা হয়েছে।
ওই মামলা প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘মহিলাদের সঙ্গে যে সব অপরাধ সংগঠিত হয়, সেই সব ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত হয়, তার জন্য আমাদের ‘ট্রায়াল মনিটরিং সেল’ আছে। ১৩ মাসের মধ্যে পুতুল-খুনের মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হল। দুই অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এই ঘটনা পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের ভরসা কয়েক কদম বাড়িয়ে দেবে।’’