বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফিরলেন তৃণমূল সাংসদ দেব। কমিটিতে জায়গা হল ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়েরও। ফলে, চর্চায় ভারসাম্যের সমীকরণ।
গোড়া থেকেই ওই পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন দেব। কিন্তু এ বার লোকসভা ভোটের আগে ইস্তফা দেন ঘাটালের সাংসদ। যদিও প্রশাসনিক ভাবে সেই ইস্তফা গৃহীত হয়নি বলে খবর। তারপর সোমবার এক নির্দেশিকায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে দেবকে পুনর্বহাল করা হয়। সঙ্গে উন্নয়ন পর্ষদের কমিটিতে সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্করকে। দেবের বিরোধী বলেই পরিচিত শঙ্কর। সংগঠনের পাশাপাশি এ বার প্রশাসনিকস্তরেও ভারসাম্য বজায় রাখতেই কি কমিটিতে শঙ্করের অন্তর্ভুক্তি, চর্চা শুরু হয়েছে ঘাটাল তৃণমূলের অন্দরে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দুশোতম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তারপরই আনুষ্ঠানিক ভাবে পর্ষদ কাজ শুরু করে। বছর চারেক ধরে পর্ষদ উন্নয়নের কাজ করলেও তার নিজস্ব ভবন থেকে কর্মী নিয়োগ, কিছুই হয়নি। মহকুমাশাসকের দফতরে একটি ছোট ঘরে উন্নয়ন পর্ষদের কাজকর্ম চলছে। পরিকাঠামোগত নানা ঘাটতি রয়েছে।
প্রথম থেকেই বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন জেলাশাসকেরা। বর্তমান জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী এখন চেয়ারম্যান। আগে দেব যখন ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন তাঁর হাতেই পর্ষদের রাশ ছিল বলে খবর। কোথায় রাস্তাঘাট বা অন্য কী উন্নয়ন হবে, সে সব দেব অনুগামীরা নিয়ন্ত্রণ করত বলে খবর। গত লোকসভা ভোটের আগে আচমকাই দেব ওই পদে ইস্তফা দেন। জেলাশাসককে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন তিনি। তবে তা গৃহীত হয়নি। এ দিন সরকারি নির্দেশিকায় দেবকে ফের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কমিটির সদস্য হিসাবে শঙ্করের নামও এসেছে। সদস্য হিসাবে আগে থেকেই রয়েছেন চন্দ্রকোনার বিধায়ক অরূপ ধাড়া। মেম্বার সেক্রেটারি ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস।
ঘাটাল তৃণমূলে দেব-শঙ্করের দূরত্ব বহু চর্চিত। করোনা পর্বে খাবার বিলি নিয়ে বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিল। গত বছর ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার কমিটি গঠন ঘিরেও দুই গোষ্ঠীর কোন্দল চরমে উঠে। তারপর নানা সময়ে প্রকাশ্যে দু’জনে কাছাকাছি এলেও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে দাঁড়ি পড়েনি।লোকসভা ভোটের সময় দফায় দফায় বৈঠকে বরফ গলেনি। এ বার বন্যার ত্রাণ বিলিতেও দূরত্বের ছবি স্পষ্ট। এই আবহে দলীয় সংগঠনের পাশাপাশি উন্নয়ন পর্ষদেও ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা হয়েছে বলে তৃণমূলের এক সূত্রের খবর।
এ ব্যাপারে দেবের সাংসদ প্রতিনিধি রামপদ মান্না বলেন, “উন্নয়ন পর্ষদে দেব ছিলেনই। উন্নয়নের কাজও চলছিল। এ বার উন্নয়নে আরও গতি বাড়বে।” আর শঙ্করের প্রতিক্রিয়া, “মুখ্যমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করব।”
নিয়ম মতো এই ধরনের উন্নয়ন পর্ষদ স্বশাসিত সংস্থা। এলাকার উন্নয়নে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একক ক্ষমতা পর্ষদের রয়েছে। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের পাশাপাশি এর কমিটির সদস্যদের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ।উন্নয়ন বা যে কোনও সিদ্ধান্তে কমিটির সদস্যদের আপত্তির বিষয়টি প্রশাসনিকস্তরে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। সবপক্ষ সায় দিলে তবেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়।