বিশ্বভারতীর কর্মিমণ্ডলীর পরিচালনায় প্রতি বছর শারদোৎসব নাম দিয়ে বিভিন্ন ভবনের তরফে নাটক মঞ্চস্থ করেন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা। সোমবার সেই উৎসবেরই মঞ্চস্থ হওয়া একটি নাটকে হিন্দি গানের ব্যবহার নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকের দাবি, এ ছাড়াও বেশ কিছু সেই নাটকে ছিল, যা রুচিসম্মত নয়, বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যেরও পরিপন্থী। এ বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ প্রতিক্রিয়া দেননি।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় থেকে শারদোৎসব নামে এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এ বছর ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত নাট্যঘরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন ভবনের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা নাটক পরিবেশন করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষাভবনের তরফে ‘গোয়েন্দা বিভ্রাট’ নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। সেই নাটকের মাঝেই হিন্দি গানের ব্যবহার করতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। সেই নাটকের কিছু অংশের ভিডিয়ো ফুটেজ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
ভিডিয়ো ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার পত্রিকা। তবে, ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, একটি নাচের দৃশ্যের আগে জনপ্রিয় হিন্দি ছবির গান ব্যবহার করা হয়েছে। আশ্রমিক ও প্রাক্তনীদের অনেকেরই অভিমত, হিন্দি গানের ব্যবহারই নয়, নাটকের বেশ কিছু দৃশ্য এমন দেখানো হয়েছে, যা শান্তিনিকেতন আশ্রমের সঙ্গে মানানসই নয়। বিশ্বভারতীরই ছাত্র শুভদীপ দে, বামনদীপ্ত পাল বলেন, “বিশ্বভারতীর নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। আমরা কখনওই চাই না, সেই সংস্কৃতির ক্ষতি হোক। ওই নাটকে যে-ভাবে হিন্দি গানের ব্যবহার এবং কিছু দৃশ্য দেখানো হয়েছে, তা বিশ্বভারতী সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না। আমরা এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।”
প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ‘‘শারদোৎসবের নাটকে আমরা কখনও হিন্দি গানের ব্যবহার দেখিনি। এটাই এখন হয়তো নতুন সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে। এই ধরনের সবই এখন হবে।” শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক তথা আশ্রমিক অনিল কোনার বলেন, “আজ পর্যন্ত শারদোৎসবে হিন্দি গানের ব্যবহার এভাবে হয়নি। শান্তিনিকেতনে এই সংস্কৃতি কখনও ছিল না। যাঁরা করেছেন, তাঁরা ঠিক করেননি।’’ তাদের এটি করা মোটেও উচিত হয়নি বলে আমি মনে করি।” উৎসবের আয়োজক বিশ্বভারতীর কর্মিমণ্ডলীর প্রাক্তন যুগ্ম সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্যও বলেন, “শারদোৎসব দেখতে পাঠভবনের শিশুরাও যায়। তাই এমন কিছু করা উচিত নয়, যা ছাত্রছাত্রীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।” বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।