রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, বড়জোড়া: হাতির আতঙ্কে বড়জোড়া, বেলিয়াতোড়, সোনামুখীর জঙ্গলঘেরা গ্রামগুলিতে দুর্গাপুজোর আনন্দ ম্লান হতে বসেছে। যে কোনও সময় বুনো হাতি জঙ্গল থেকে বের হয়ে লোকালয়ে হামলা চালাতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। ফলে মন খুলে তাঁরা শারদীয়ার উৎসবে মেতে উঠতে পারবেন না বলে উপদ্রুত গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন মহলে আবেদন-নিবেদন করেছেন। বুধবার উত্তর বাঁকুড়ার জঙ্গল লাগোয়া একাধিক গ্রামে ঘুরে বাসিন্দাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। বনদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে বড়জোড়া রেঞ্জের পাবয়ার জঙ্গলে দু’টি ও বেলিয়াতোড় রেঞ্জের কাঁটাবেশিয়া জঙ্গলে চারটি রেসিডেন্সিয়াল হাতি রয়েছে। হাতিগুলি ততটা মারমুখী না হলেও মাঝেমধ্যেই লোকালয়ে ঢুকে বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি করছে। পুজোর সময় ঢাক ও লাউড স্পিকারের শব্দে তাদের ‘মতিগতি’ কেমন থাকবে, সেটা নিয়ে বনদপ্তরের আধিকারিকরা কিছুটা চিন্তায় রয়েছেন।
রাস্তায় দেখা হল পরেশ কর্মকার, রাজু কেওড়ার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, বড়জোড়া ব্লকের গোদারডিহি, পাবয়া, সরগাড়া গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলগুলিতে হাতিগুলি আনাগোনা করছে। প্রায় দিনই কোনও না কোনও গ্রামের বাসিন্দা হাতির তাণ্ডবের সাক্ষী থাকছেন। ফসল ও সম্পত্তি বাঁচাতেই আমরা ব্যস্ত রয়েছি। দুর্গাপুজোর আনন্দ উপভোগ করার মতো জায়গায় আমরা নেই। বাড়ির মহিলা, শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে চিন্তাই রয়েছি। দিনের আলো থাকতেই পুজো মণ্ডপ থেকে বাড়ি ফেরার জন্য সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
বেলিয়াতোড় এলাকার বাঁধকানা থেকে গোদারডিহি যাওয়ার রাস্তা ধরে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল দুই স্কুল ছাত্রী। শম্পা মণ্ডল ও কেয়া চট্টোপাধ্যায় বলে, হাতির ভয়ে আমরা স্কুল ও টিউশন যেতে পারি না। কখন যে জঙ্গল থেকে গজরাজ বের হয়ে হানা দেবে, তা কেউ বলতে পারে না। দুর্গোৎসবের দিনগুলিতেও আতঙ্ক পিছু ছাড়বে না।
বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, দুর্গাপুজোর মুখে হাতির সমস্যা নিয়ে বাসিন্দারা নাজেহাল হয়েছেন। এনিয়ে তাঁরা প্রায়ই আমার কাছে দরবার করছেন। উপদ্রুত এলাকায় বেশ কিছু হাইমাস্ট আলো বসানোর ব্যবস্থা করেছি। আরও লাগানোর জন্য বনদপ্তরকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাস্তার পাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার জন্যও দপ্তরের আধিকারিকদের বলেছি। বিষয়টি নিয়ে বনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বাঁকুড়ার জেলাশাসক ও ডিএফওকেও সমস্যার কথা এদিন টেলিফোনে জানিয়েছি। তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
বাঁকুড়া উত্তরের ডিএফও দেবাশিস মহিমাপ্রসাদ প্রধান বলেন, রেসিডেন্সিয়াল হাতি তাড়ানো যায় না। জঙ্গলে খাবারের খোঁজে সেগুলি যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায়। তবে পুজোর সময় সেগুলির উপর বাড়তি নজর রাখার জন্য আধিকারিকদের বলা হয়েছে।