নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: করোনার চোখ রাঙানিতে তখন শুনশান সারা বিশ্ব। নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে আপন লোককে দূরে সরিয়ে রাখতে অনেকে কুন্ঠাবোধ করেনি। শুধু সামনে থেকে লড়েছিলেন ডাক্তাররা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তাঁরাই ‘ভগবান’ হয়ে উঠেছিলেন আমজনতার কাছে। সেই ভগবানরাই এখন মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই আমজনতার। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে বাবার চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন ঝুমা পাত্র। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলছিলেন, আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ সারা রাজ্যের মানুষ করেছে। বর্ধমানেরও আমজনতা পথে নেমেছিলেন। ১৪আগস্ট রাতে আমজনতার ডাকে কার্জন গেটের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছিল। এমন ভিড় আগে দেখা যায়নি। তারপরও ডাক্তারদের এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। রোগীদের পরিষেবা না দিয়ে তাঁরা ভুল করছেন। কাঁকসার রাজু সাঁতরা বলেন, জুনিয়র ডাক্তাররা আউটডোরে না বসায় রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। প্রতিবাদ অন্যভাবেও করা যেতে পারে। চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করে এভাবে আন্দোলনের যুক্তি নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনিয়র ডাক্তাররা এখন ইনডোরে পরিষেবা দিচ্ছেন। কিন্তু কোনও রোগীর আত্মীয় কিছু নিয়ে প্রতিবাদ করলেই তাঁরা রুদ্রমূর্তি ধারণ করছেন। কয়েকদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি থাকা মুর্শিদাবাদের এক রোগী মারা যান। তাঁকে সাপে কেটেছিল। মৃত্যুর পর মৃতার পরিবারের লোকজন চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান। তারপরই নিরাপত্তার দাবিতে জুনিয়র ডাক্তাররা পাল্টা বিক্ষোভ দেখান। আচমকা কর্মবিরতি শুরু করেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীর আত্মীয় পূর্বস্থলীর বাসিন্দা উজ্জ্বল সরকার বলেন, হঠাৎ করে কোনও রোগীর মৃত্যু হলে পরিবারের লোকজনের মানসিক অবস্থা ঠিক থাকে না। মৃতের বয়স ছিল ৩৮বছর। এত কম বয়সে একজন মারা যাওয়ায় পরিবারের লোকজন মেজাজ হারান। কটূ কথা বলা অন্যায়। কিন্তু তাই বলে ‘ভগবান’রা চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করে দেবেন এটা মেনে নেওয়া যায় না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক জোরালো করা হয়েছে। পুলিসকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারপরও জুনিয়র ডাক্তাররা নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি তাপস ঘোষ বলেন, জুনিয়র ডাক্তাররা প্রথমদিন থেকেই জরুরি পরিষেবা দিচ্ছেন। সিনিয়র ডাক্তাররা আউটডোরে পরিষেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এবার ‘ভগবান’দের মুখ তুলে তাকানো উচিত বলে রোগীর পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন।