নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: মহালয়া থেকেই পুজো মুডে নবাবী মুলক। পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করার জন্য ভোর থেকে গঙ্গা ও ভাগীরথী নদীর ঘাটে ভিড় জমান পুণ্যার্থীরা। নদীর জলস্তর বৃদ্ধি সত্ত্বেও সচেতনতার সঙ্গে নির্বিঘ্নে এদিন তর্পণ সম্পন্ন হয়। জেলার প্রায় ৫০টি ঘাটে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর জমায়েতের জন্য আগেভাগে প্রস্তুতি নেয় প্রশাসন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি ঘাটেই বাড়তি পুলিস মোতায়েন করা হয়। সাধারণ মানুষ পুলিসের নির্দেশ মেনেই নির্বিঘ্নে তর্পণ সম্পন্ন করে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও এদিন গঙ্গার ঘাটে তর্পণে অংশ নেন। তাঁদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য পৃথক জায়গারও ব্যবস্থা করা হয়। অনেক বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুরাও এদিন জলে নামে। তাদের যাতে বিশেষ খেয়াল রাখা হয় সেই জন্য ঘনঘন মাইকিং করা হচ্ছিল।
বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ ঘাটে সপরিবারে তর্পণ করতে এসেছিলেন পিনাকী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, গত ১২ বছর ধরে এই ঘাটেই তর্পণ করছি। তবে এবার যেন একটু বেশি কড়াকড়ি ছিল। ভাগীরথীতে জলস্তর বৃদ্ধির কথা আমরা আগেই জেনেছি। সেই জন্য অল্প জলে দাঁড়িয়েই তর্পণ সম্পন্ন করলাম।
মহালয়ার তর্পণ সেরে বিকেল থেকেই পুজোয় ঢুকে পড়ল জেলাবাসী। মুর্শিদাবাদ জেলার ১৫টি বড় পুজোর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেবীপক্ষের শুরুতেই আনুষ্ঠানিকভাবেই উৎসবের ঢাকে পড়ল কাঠি। জেলাজুড়ে পুজো উন্মাদনায় গা ভাসালেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। বুধবার সন্ধ্যায় বহরমপুরের বিটি কলেজ বটতলার ভট্টাচার্যপাড়া সর্বজনীন, অযোধ্যানগর সর্বজনীন, মধুপুর বালার্ক সঙ্ঘ ও সৈদাবাদ কুহেলী সঙ্ঘের পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ভট্টাচার্যপাড়ার পুজোর মণ্ডপে হাজির ছিলেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র, পুলিস সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব সহ পুজো উদ্যোক্তারা। এছাড়া কান্দি, লালবাগ, ডোমকল ও জঙ্গিপুর মহকুমার ১১টি পুজোর তিনি উদ্বোধন করেন। জেলাবাসীকে শারদ শুভেচ্ছা জানিয়ে বানভাসি এলাকার দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, মুর্শিদাবাদের মানুষ সর্ব ধর্ম নিয়ে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী আপনারা। অনেক ইতিহাসের উত্থান পতন দেখেছেন। আপনাদের সকলকে সাক্ষী রেখে আমরা পথ চলি। সকলে সুস্থ থেকে ভালোভাবে পুজো কাটান। গঙ্গার প্লাবনে যে মানুষগুলি বানভাসি হয়েছে, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবেন। মুর্শিদাবাদের পুজো খুব ভালো হয়েছে, আপনাদের অনেক শারদ শুভেচ্ছা। জঙ্গিপুরের রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় চৈতক অ্যাথলেটিক ক্লাবে হাজির ছিলেন তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, শারদ উৎসব শুরু হল। আমাদের সকলের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী এদিন জেলার ১৫টি পুজোর উদ্বোধন করেছেন। আমরা সকলেই খুব খুশি। জেলার মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। সকলের পুজো ভালো কাটুক।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর করতালিতে ফেটে পড়েন পুজো উদ্যোক্তারা। পুজো উদ্যোক্তারা প্রতিটি জায়গায় বড় পর্দা লাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পুজো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি দেখানোর ব্যবস্থা করেন।